ডেস্ক নিউজ
বর্তমানে সারাদেশের ১০টি সেতু-মহাসড়কের ফাস্ট ট্র্যাক বা দ্রুতগতির লেন ব্যবহার করে ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) বা স্বয়ংক্রিয় টোল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আর এ প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত টোলের ওপর ১০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। এতে গত ছয় মাসের ব্যবধানে এসব স্বয়ংক্রিয় টোল প্লাজাগুলো থেকে টোল আদায় বেড়েছে ২৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
ইটিসি এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে টোল গেট অতিক্রম করার সময় গাড়ি না থামিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই টোল পরিশোধ করা যায়। গাড়িতে বিদ্যমান সচল ও কার্যকর রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগের মাধ্যমে টোল দেওয়া যায়।
এ প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো, এটি সড়কের যানজট হ্রাস করে। অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে- জ্বালানি সাশ্রয়, টোল সংগ্রহের ক্ষেত্রে সময় সাশ্রয়, মহাসড়কের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যানবাহনের ধোঁয়া নির্গমন কমিয়ে পরিবেশ দূষণের মাত্রা হ্রাস। বিশ্বজুড়ে ইটিসি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ হলো- এ পদ্ধতিতে টোল দিতে গাড়িচালকদের নগদ অর্থ সঙ্গে রাখার প্রয়োজন পড়ে না।
দেশের মেঘনা সেতু, গোমতি সেতু, ভৈরব সেতু, শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু, আত্রাই টোল প্লাজা, চরসিন্দুর সেতু, খান জাহান আলী সেতু, লালন শাহ সেতু, পায়রা সেতু, শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় ইটিসি লেন চালু রয়েছে।
গত জুলাই মাসের হিসাব অনুযায়ী, ইটিসি লেন ব্যবহার করে শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় ৩ হাজার ২১টি যানবাহন থেকে ২১ লাখ ৬১ হাজার ১৮৪ টাকা, মেঘনা ও গোমতি সেতুতে ৭ হাজার ৫৭৬ যানবাহন থেকে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭০৩ টাকা, ভৈরব সেতুতে ৫ হাজার ৭৫৮ যানবাহন থেকে ১১ লাখ ২৮ হাজার ৩৩১ টাকা, শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতুতে ৫ হাজার ১৪৩ যানবাহন থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬১ টাকার টোল আদায় করা হয়।
অন্যদিকে, আত্রাই টোল প্লাজায় ২১ যানবাহন থেকে ৬৫২ টাকা, খান জাহান আলী সেতুতে ৭৩৭ যানবাহন থেকে ৫৪ হাজার ৪১৫ টাকা, লালন শাহ সেতুতে ৫৩ যানবাহন থেকে ৩ হাজার ২১৭ টাকা, পায়রা সেতুতে একটি যানবাহন থেকে ৯৫ টাকার টোল আদায় করা হয়েছে। তবে চরসিন্দুর সেতু থেকে কোনো টোল সংগ্রহ হয়নি।
গত সাত মাসের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ইটিসি লেন ব্যবহারকারী ২০ হাজার ৬৭৪ যানবাহন থেকে ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৮৫৫ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১৯ হাজার ৫৯৭ যানবাহন থেকে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪০ টাকা, মার্চে ২২ হাজার ২১৮ যানবাহন থেকে ৪৯ লাখ ৭৪ হাজার ৬১০ টাকার টোল আদায় করা হয়।
অন্যদিকে, এপ্রিলে ১৯ হাজার ১৪২ যানবাহন থেকে ৪১ লাখ ৯৭ হাজার ৩২০ টাকা, মে মাসে ২২ হাজার ৯৬ যানবাহন থেকে ৪৮ লাখ ১০৮ টাকা, জুনে ২১ হাজার ৩৬৯ যানবাহন থেকে ৪৭ লাখ ৩২ হাজার ৬৬৪ টাকা ও জুলাইয়ে ২৪ হাজার ৪০৩ যানবাহন থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ ২৮ হাজার ৫০৯ টাকার টোল স্বয়ংক্রিয়ভাবে আদায় করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দ্রুতগতির লেন ব্যবহারে প্রণোদনা দেওয়া হলে ইটিসি ব্যবহারে আগ্রহী হবেন মোটরযান চালকরা। এ কথা মাথায় রেখেই অর্থ বিভাগের সম্মতিতে দ্রুতগতির লেন ব্যবহারকারীদের জন্য নির্ধারিত টোল থেকে ১০ শতাংশ অর্থ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টোল সংগ্রহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ইটিসি লেন ব্যবহারে অনুপ্রাণিত করতে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জানা যায়, গত ২৫ এপ্রিল এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়। পরে গত ৩০ মে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব ফাহমিদা হক খানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে ১ জুন থেকে এ ছাড় কার্যকরের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই ইটিসি লেন ব্যবহারে ১০ শতাংশ ছাড় মিলছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব-পশ্চিম টোল প্লাজায় ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে একটি করে দ্রুতিগতির ইটিসি লেন চালু করা হয়। এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ হাজার গাড়ি পার হয়।
এত বিপুলসংখ্যক গাড়ি থেকে টোল আদায় করতে গিয়ে কোনো কোনো লেনে প্রায়ই তিন-চারটি গাড়ির লাইন তৈরি হয়ে যায়। এছাড়া, ঈদে কিংবা বিভিন্ন উৎসবে গাড়ির সংখ্যা যখন ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায় তখন লেনে গাড়ির লাইন অনেক দীর্ঘ হয়। তবে ইটিসি এ সমস্য সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের (টোল ও এক্সেল) উপ-সচিব ফাহমিদা হক খান জাগো নিউজকে বলেন, গত ১ জুন থেকে ছাড় কার্যকর করার পর থেকে দ্রুতগতির লেন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। জনসাধারণকে এ লেন ও ইটিসি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি। সামনে ইটিসি ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
সার্বিক বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী জাগো নিউজকে বলেন, ইটিসি ও দ্রুতগতির লেন নিয়ে আমরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছি। সবার মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়েছি, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছি, টিভিতে স্ক্রলও দিচ্ছি।
‘দ্রুতগতির লেন ব্যবহার করলে টোলের ওপর সরকার ১০ শতাংশ ছাড় দেবে। তাছাড়া, যেহেতু এ লেনে টোল পরিশোধের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না সেহেতু প্রচারণা চালু রাখলে ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে আশা করছি।’
যেভাবে সম্পন্ন হয় ইটিসি প্রক্রিয়া:
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস-পে অথবা রকেট অ্যাকাউন্টের টোল কার্ড ব্যবহার করে এ সুবিধা পাওয়া যায়। সুবিধাটি পেতে গাড়ির নম্বরটি টোল কার্ডের সঙ্গে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের যেকোনো শাখা, ফাস্ট ট্র্যাক বা নেক্সাস-পে থেকে রেজিস্ট্রেশন করে প্রয়োজনীয় ব্যালেন্স নিশ্চিত করা হয়। আর ব্যবহারকারীর গাড়িতে থাকা সচল-কার্যকর রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগের মাধ্যমে সহজেই টোল দেওয়া যায়।