ডেস্ক নিউজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসিক হলে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়েদের থাকতে না দেওয়ার যে বিধান ছিলো, তা বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিগত কয়েক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে বুধবার সন্ধ্যায় উপাচার্য বাসভবনে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় এই নিয়ম বাতিলের সুপারিশ করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের এতে সভাপতিত্ব করেন। বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী।
তিনি বলেন, আবাসিক মেয়েদের হলে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বাজনিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিনিষেধ রহিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীর মাতৃত্বজনিত স্বাস্থ্য ও শিশুর নিরাপদ স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পারিবারিক পরিেিবশে থাকার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় সমীচীন মনে করেছে। প্রভোস্ট কমিটির সভার সিদ্ধান্ত সুপারিশ হিসেবে পরবর্তী সিন্ডিকেটে উত্থাপন করা হবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ আবাসিক হলের মধ্যে ছাত্রী হল পাঁচটি। ছাত্রী হলগুলোতে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের থাকার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ রয়েছে। এছাড়া আবাসিক হয়ে হলে ওঠার সময় একজন ছাত্রীর ২৭টি শর্ত সম্বলিত একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। এর মধ্যে একটি ধারায় উল্লেখ আছে ‘কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তার সিট বাতিল করা হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলে এক ছাত্রীর সিট বরাদ্দ দেয়া নিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসে বিষয়টি। পরবর্তীতে এই নিয়মকে ‘অদ্ভূত ও আদিকালের’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। এই নিয়ম বাতিলের দাবি জানিয়ে উপাচার্যের নিকট লিখিত আবেদন জানান তারা।
দাবিগুলো হলো- ‘বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার যে বিধি-নিষেধ ও তাদের জন্য প্রচলিত যে নিয়ম তা বাতিল করা; শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষার্থে সব ছাত্রী হলে ‘স্থানীয় অভিভাবক’-এর পরিবর্তে ‘জরুরি যোগাযোগ’ শব্দের প্রবর্তন করা; আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে হয়রানি বন্ধ করাসহ হয়রানি করলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ও শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল করাসহ জরুরি প্রয়োজনে তাদের হলে থাকতে দেওয়া।’ এই ঘটনার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহল থেকে নিয়মটি বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবি জানানো হয়।
এ ছাড়া বুধবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এই নিয়ম বাতিল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্টার এবং শামসুন নাহার হল, বাংলাদেশ-কুয়েত-মৈত্রী হল ও সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্টকে আইনি নোটিশ পাঠান। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যায় প্রভোস্ট কমিটির সভা ডেকে বাতিলের সুপারিশ করা হয়।