ডেস্ক নিউজ
প্রতি বছরই নির্মাণ করা হয় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ। প্রতি বছরই এ কাজে অনিয়ম ও গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। উজান থেকে ঢলও নামে প্রতি বছর। বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় হাওরের ফসল। যে বছর বৃষ্টিপাত ও ঢল বেশি হয়, সে বছর ফসলের ক্ষতিও হয় বেশি।
হাওরের কৃষক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা, প্রশাসনের কর্মকর্তা আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঁধের কাজে অনিয়ম ও গাফিলতি কমলে ফসল কিছুটা রক্ষা পাবে। তবে ঢল বেশি হলে কেবল বাঁধ নিয়ে এখন আর ফসল রক্ষা করা যাবে না।
তাদের মতে, এ অঞ্চলের সবগুলো নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এতে অল্প ঢলে নদী উপচে পানি হাওরে প্রবেশ করছে। হাওরের ফসল রক্ষায় তাই ব্যাপক আকারে নদী খনন প্রয়োজন।
এরই ধারাবাহিকতায় হাওরের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ১ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। প্রকল্পটি একনেক সভায় পাশ করিয়ে আগামী নভেম্বরেই কাজ শুরুর আশা করা হচ্ছে।
শনিবার দুপুরে বরিশাল সদর উপজেলা চত্ত্বরে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ধানের বীজ ও সার বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি জানান, উজানের পানি প্রবাহে প্রায় প্রতিবছরই হাওর এলাকার বাঁধ ভাঙে। উজানের পানির সঙ্গে আসা পলিতে ওই এলাকার ১৪টি নদী ভরাট হয়ে গেছে। এসব নদী খননে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
হাওরের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নেয়া প্রকল্পটি অনুমোদন হলে হাওরের সমস্যা থাকবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
দেশের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ১৪ হাজার ৫৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে হাওরাঞ্চল বিস্তৃত। ৪১৪টি হাওর আছে এই অঞ্চলে। আর এসব হাওরের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে মেঘনা, সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, পিয়াইন, বউলাই, কাতলাই, সোমেশ্বরী, খোয়াইসহ অন্তত ১৪টি নদী।
তলদেশ ভরাট হয়ে সবগুলো নদীই এখন নাব্য হারিয়েছে। ফলে অল্প বৃষ্টি বা ঢলেই নদী উপচে আশপাশের এলাকায় পানি ছড়িয়ে পড়ছে।
গত বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা দেশের উত্তরপূর্ব এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে সিলেট, সুনামগগঞ্জ ও হবিগঞ্জে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। যে কারণে ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে এসব এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।
বন্যার পূর্বাভাসে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে হবিগঞ্জের কৃষকদের কপালে।
সরেজমিনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা যায়, এখনও অধিকাংশ জমির ফসল পাকেনি। তারপরও ডুবে যাওয়ার আতঙ্কে আধাপাকা ধানই কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা।
এ ছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত ধনু নদীর পানি প্রবাহ আবারও বেড়েছে।
সর্বশেষ পরিমাপে দেখা গেছে, নদীটির পানি প্রায় বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে আবারও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে নেত্রকোণার খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলাসহ বেশকিছু ফসল রক্ষা বাঁধ।