ডেস্ক নিউজ
রাজধানীর হাতিরঝিলের পানি ও সৌন্দর্যকে ‘অমূল্য সম্পদ’ হিসেবে বর্ণনা করে ওই লেকে চলমান ওয়াটার ট্যাক্সিসহ সব ধরনের যান্ত্রিক বাহন বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ৩০ জুন হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে রায় দেন। মঙ্গলবার (২৪ মে) ওই পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ ৪ দফা নির্দেশনা এবং ৯ দফা সুপারিশ দেন হাইকোর্ট।
প্রকল্পটির নকশার নির্দেশনার বাইরে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ২০১৮ সালে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। পরে ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত বছরের জুনে রায় দেয়া হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদের কোনোরূপ ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না। প্রতি ফোঁটা পানি অতি মূল্যবান। সুতরাং প্রতিটি ফোঁটা পানির দূষণ প্রতিরোধ একান্ত আবশ্যক।
চার দফা নির্দেশনা হলো-
সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদী রায় মোতাবেক রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকা যা ‘হাতিরঝিল’ নামে পরিচিত, তা ‘পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি’ তথা জনগণের জাতীয় সম্পত্তি।
হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ এবং নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদীর রায় অনুযায়ী বেআইনি ও অবৈধ।
হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দ করা সব হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত মর্মে এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হল।
এ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সব ধরনের হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাতিলঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প এলাকা নিয়ে ৯ দফা পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনায় একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ তথা ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা, যা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীনে থাকবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ করা।
জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন করা।
নির্ধারিত দূরত্বে বিনামূল্যে জনসাধারণের জন্য পান করার পানির ব্যবস্থা করা।
পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করা।
পানির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় লেকে সব ধরনের যান্ত্রিক বাহন তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
লেকে মাছের অভয়ারণ্য করা।
হাতিরঝিল- বেগুনবাড়ি প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করা।
হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ বাজেট থেকে বরাদ্দ করা।
রায়ের বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট গত ৩০ জুন হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প নিয়ে রায় দিয়েছেন। তবে রায়ের পরপরই রাজউক এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। কিন্ত ওই রায় আপিল বিভাগে স্থগিত হয়নি। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। রাজউকের করা আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা আশা করছি, আপিল বিভাগেও হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে।