ডেস্ক নিউজ
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহর থেকে অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরে থাকেন আমেনা বেগম। স্বামী বিদেশে থাকেন আর ছেলে স্কুলে পড়ে। ৩ বছর ধরে বিদেশ থেকে আসা টাকা তোলার জন্য তাকে আর উপজেলা শহরের ব্যাংকে যেতে হয় না। আগে নিয়মিত উপজেলা শহরে গিয়ে ব্যাংকের টাকা তুলতেন। তিন বছর ধরে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে গিয়ে সেই টাকা তুলছেন। ছেলের স্কুলের বেতনও এজেন্টের কাছে জমা দেন তিনি। আমেনা বেগমের মতো অসংখ্য মানুষ যারা প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করেন টাকা জমা দেয়া বা তোলা ছাড়াও নানা ধরনের ব্যাংকিং সেবার জন্য এখন প্রতিনিয়ত ভিড় করেন বিভিন্ন ব্যাংকের এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে। বর্তমানে দেশব্যাপী পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে ১০ হাজারের বেশি এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্ট রয়েছে। আউটলেটের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। আমেনা বেগমের মতো গ্রাহকের সংখ্যা এখন এক কোটির কাছাকাছি। একই সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় কম খরচে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে ব্যাংকের শাখার আদলে গড়ে ওঠা ‘উপশাখা’। এসব উপশাখায় প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন গ্রাহক, বাড়ছে আমানত। উপশাখা থেকে খুব সহজেই প্রান্তিক কৃষক, খামারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে পারছেন। ফলে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার নতুন সম্ভাবনা হয়ে উঠছে ‘উপশাখা’। ইতোমধ্যে ৩০টি ব্যাংক সারা দেশে এক হাজার ২৭৫টি উপশাখা চালু করেছে।
জানা যায়, বিশ্বের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ব্রাজিলে। দ্রুততম সময়ে এ ব্যাংকিং ধারণা ছড়িয়ে যায় চিলি, কলম্বিয়া, পেরু ও মেক্সিকোয় এমনকি কেনিয়াসহ আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার এ সেবা চালু হয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও। আর বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১৪ সালে। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংক এশিয়া পাইলট প্রকল্প হিসেবে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে। পরে অনেক ব্যাংকই এ সেবা নিয়ে এগিয়ে আসে। দেশে বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪। ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আমানত রাখা, ঋণ বিতরণ ও প্রবাসী আয় আনার পাশাপাশি স্কুল ব্যাংকিং চালু করেছে এবং গ্রামগঞ্জে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর ভাতাও বিতরণ করছে এজেন্টরা। সব মিলিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হওয়ার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশব্যাপী পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে এ রকম ১০ হাজারের বেশি এজেন্ট রয়েছে। বিদায়ী ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন এই ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে ৮২ লাখ গ্রাহক হিসাব খুলেছেন। ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা এক কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বলে জানান ব্যাংক কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরুর দিকে মার্চ-এপ্রিলে ব্যাংকের শাখা বন্ধ থাকার সময় সব এজেন্ট খোলা ছিল। এতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছে। বদৌলতে করোনাকালে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় ভাল প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে এজেন্টের সংখ্যা বেড়ে হয় ১০ হাজার ১৬৩, যা মার্চে ছিল ৮ হাজার ২৬০। করোনার মধ্যে ৬ মাসে এজেন্ট বেড়েছে ১ হাজার ৯০৩। সেপ্টেম্বর শেষে আউটলেট বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ১৬টি, মার্চে যা ছিল ১১ হাজার ৮৭৫টি। ৬ মাসে আউটলেট বেড়েছে ২ হাজার ১৪১টি। আর সেপ্টেম্বর শেষে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ লাখ ২১ হাজার ৮৯৩ জনে, যা মার্চে ছিল ৬৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫১ জন। করোনার ৬ মাসে গ্রাহক বেড়েছে ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৪২।
জানা গেছে, মার্চ-সেপ্টেম্বর সময়ে নতুন যে হিসাব খোলা হয়েছে, তার মধ্যে নারীর হিসাবের সংখ্যা প্রায় আট লাখ। ফলে গত সেপ্টেম্বরে নারীদের হিসাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার, মার্চে যা ছিল ২৯ লাখ ৫৬ হাজার। আবার মোট ৮২ লাখ হিসাবের মধ্যে গ্রামীণ হিসাবই ৭১ লাখ ১২ হাজার। মার্চে এই সংখ্যা ছিল ৫৫ লাখ ৮৩ হাজার। অর্থাৎ ৬ মাসে গ্রামের মানুষদের হিসাব বেড়েছে ১৫ লাখ ২৯ হাজার।
ব্যাংকাররা বলেন, কেউ বাসার পাশে সেবা পাওয়ায়, আবার কেউ সঞ্চয়ের জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব খুলেছেন। করোনাকালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ও আমানতের পাশাপাশি ঋণ বিতরণ আর প্রবাসী আয় তথা রেমিটেন্স আনার পরিমাণও বেড়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গত সেপ্টেম্বরে আমানত বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৪০ কোটি টাকা, মার্চে যা ছিল ৮ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। এই সময়ে আমানত বেড়েছে ৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা, মার্চে যা ছিল ৬৭৩ কোটি টাকা। ঋণ বেড়েছে ৪১৩ কোটি টাকা। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে যেখানে এজেন্টদের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, সেখানে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকের চেয়ে পরের তিন মাসে প্রবাসী আয় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল মওলা জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে ২০১৪ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়। ইসলামী ব্যাংক এ কার্যক্রম শুরু করে ২০১৭ সালে। খুব কম সময়ের মধ্যেই ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা আগ্রহী করে তুলেছে। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং দেশের ৪৬২ উপজেলায় পৌঁছে গেছে। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক দেশজুড়ে ৩১০টি শাখার অধীনে ২ হাজার ৩০০ এজেন্ট আউটলেট পরিচালনা করছে। করোনা মহামারীর বছরেই ১ হাজার ২৬১ আউটলেট চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স আহরণ ও আমানতের দিক থেকে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং এখন শীর্ষ অবস্থানে আছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করতে পেরেছে ইসলামী ব্যাংক। মনিরুল মওলা বলেন, করোনার শুরুতে ব্যাংকের অনেক শাখা বন্ধ ছিল। এজেন্টরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। বাড়িতে গিয়ে গ্রাহকদের সেবা দিয়েছেন। এতে গ্রাহকদের আস্থা বেড়েছে।
আর্থিক সেবার বাইরে থাকা মানুষকে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনতে সবসময় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ‘উপশাখা’ খোলার অনুমতি দেয়া হয় ২০১৮ সালে। মূলত উপশাখা হলো ব্যাংকের শাখার আদলে ছোট পরিসরের ব্যবসাকেন্দ্র, যা আগে ব্যাংকিং বুথ নামে পরিচিত ছিল। এটি নিকটবর্তী কোন শাখার অধীনে পরিচালিত হয়। উপশাখায় সর্বোচ্চ ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। তবে কোন কোন উপশাখা দুই-তিনজন কর্মকর্তাও চালাচ্ছেন। কম লোকবল ও সাজসজ্জার কারণে খরচও কম। এর ফলে ব্যাংকগুলো উপশাখা স্থাপনে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। উপশাখায় বৈদেশিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ছাড়া ব্যাংকের সব ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় হাটবাজার বা বাড়ির কাছে ব্যাংকের স্থাপিত এসব উপশাখায় ব্যাংক হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, আমানত রাখা, ঋণসুবিধা, ইউটিলিটি বিল জমাসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন গ্রাহক, আমানত ও ঋণ বিতরণের পরিমাণ। অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা খরচ কম হওয়ায় ব্যাংকগুলোও উপশাখা স্থাপনে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। ব্যাংকাররা বলছেন, উপশাখার মাধ্যমে কম খরচে আর্থিক সেবার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের কাছে সরাসরি ব্যাংকের সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। আবার গ্রাহকদের ওপর কোন ধরনের বাড়তি ফি বা চার্জ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না। ফলে উপশাখার সেবা দিন দিন প্রসার ও জনপ্রিয় হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে উপজেলা ও থানাপর্যায়ে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা রয়েছে। তবে উপজেলা ও থানাপর্যায়ে ব্যাংকের শাখা থাকলেও তা সাধারণত উপজেলা বা থানার হেড কোয়ার্টার অথবা প্রধান ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ফলে ওই উপজেলার দূরবর্তী অঞ্চলের লোকজন ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ ১০-২০ কিলোমিটার দূর থেকে ব্যাংকে যাওয়া সব সময় সব মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ সমস্যা সমাধানে উপশাখা ব্যাংকিং এখন কার্যকরী ভূমিকা রাখছে।
জানতে চাইলে বেসরকারী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা একটি শাখা খুলে যে বেনিফিট পাই, মোটামুটি একই রকম বেনিফিট উপশাখা খুলেও পাচ্ছি। এর মাধ্যমে কম খরচে ব্যাংকের নেটওয়ার্কও বিস্তৃত করা সম্ভব হচ্ছে। আবার শাখার মতো প্রায় সব ধরনের সেবা পাওয়ায় গ্রাহকদের জন্যও সুবিধা হচ্ছে। তাদের সরাসরি ব্যাংকের সেবা নেয়ার জন্য বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিও ত্বরান্বিত হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সিরাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যাংকের পক্ষে সব জায়গায় শাখা খোলা সম্ভব না। আবার সব জায়গায় খুললে লাভের মুখ দেখতে পারবে কি না সেটিও বড় বিষয়। তাই যেসব জায়গায় ব্যাংক শাখা দিতে পারছে না বা শাখা খোলা অলাভজনক, কিন্তু জনগণকে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনা প্রয়োজন ওইসব এলাকার মানুষকে আর্থিক সেবায় আনার ক্ষেত্রে উপশাখা ভূমিকা রাখছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোও মানুষের আরও দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত হচ্ছে। অন্যদিকে কর্মসংস্থানও বাড়ছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং বুথ স্থাপনসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, ব্যাংকিং বুথের আয়তন হবে এক হাজার বর্গফুটের মধ্যে। এর পরই ব্যাংকগুলো বুথ স্থাপন জোরদার করে। আর গত ডিসেম্বরে ব্যাংকিং বুথের নাম পাল্টে উপশাখা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপশাখায় সব রকম ব্যাংক হিসাব খোলা, নগদ টাকা জমা ও উত্তোলন, চেকবই ও পে-অর্ডার ইস্যু, ক্লিয়ারিং চেক ও পে-অর্ডার জমা, আমানত ও ঋণসুবিধা, রিয়েল টাইম অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা, ইউটিলিটি বিল জমাসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হয়। ব্যাংকের গ্রাহক ভিত্তি দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা, ব্যাংকিং আওতাবহির্ভূত এলাকার জনগণের নিরাপদ সঞ্চয়ের সুযোগ সৃষ্টি, বৈদেশিক রেমিটেন্সের অর্থ সহজে ও দ্রুততম সময়ে সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছানো, দেশব্যাপী জনগণের অর্থের প্রবাহকে সহজতর ও ঝুঁকিমুক্ত করা, পশ্চাৎপদ এলাকার অর্থায়নের মাধ্যমে স্থানীয়পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আধুনিক ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়াও উপশাখার অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত বলেও জানান তারা। রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বরের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। তার বাসার কাছেই উপশাখা খুলেছে ইসলামী ব্যাংক। আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বাসার কাছাকাছি হওয়ায় উপশাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলেছি। কোন ঝামেলা ছাড়াই প্রতি মাসেই সঞ্চয়ের টাকা জমা করি। এতে আমার সময় যেমন বেঁচে যায়, তেমনি কোন যাতায়াত খরচও লাগে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারী-বেসরকারী ৩৭টি ব্যাংক উপশাখা খোলার অনুমতি নিয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি ব্যাংক সারাদেশে এক হাজার ২৭৫টি উপশাখা চালু করেছে। সবচেয়ে বেশি উপশাখা খুলেছে নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। ব্যাংকটি সারাদেশে ৩২৮টি উপশাখা খুলেছে। উপশাখা বিষয়ে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল জনকণ্ঠকে বলেন, স্বল্প ব্যয়ে মানুষকে বেশি সেবা দেয়ার জন্য আমাদের ব্যাংকই সবার আগে উদ্যোগ নেয়। এক্সপ্রেস ব্যাংকিং হিসেবে আমরা প্রথম কাজ শুরু করি। উপশাখা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার দেয়ার আগে থেকেই আমরা এমন মডেলে নিয়ে কাজ শুরু করি। এরপর ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সেন্টার হিসেবে কাজ শুরু হয়। গার্মেন্টস এলাকা, বিআরটিএ, জমি রেজিস্ট্রেশন অফিসে কাজ শুরু হয়। অন্য ব্যাংকগুলো উপশাখাকে ডিপোজিট হান্টিং সেন্টার করলেও আমরা সার্ভিস পয়েন্ট হিসেবে তা প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছি এবং পেরেছি। ৬০ ফুট থেকে শুরু করে ১ হাজার ফুট পর্যন্ত আয়তনে আমাদের উপশাখাগুলো রয়েছে। বর্তমানে আমরা ৮৩টি শাখার মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি, অন্যদিকে বিআরটিএ ও ভূমি রেজিস্ট্রেশন বুথসহ ৪০০টি উপশাখা ও ৫৮৯টি এজেন্ট বুথের মাধ্যমে একেবারে নি¤œ আয়ের মানুষদের পাশে গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য চলতি বছরেই উপাশাখাগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ করে লক্ষাধিক ব্যক্তির কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, খরচের দিক থেকে উপশাখাকে স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং সেবার আউটলেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে প্রচলিত শাখা স্থাপনের জন্য নির্ধারিত বিভিন্ন ব্যয়সীমার চেয়ে উপশাখা স্থাপনের ব্যয় এবং প্রচলিত শাখা কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাংকিং সেবার জন্য নির্ধারিত ফি, চার্জ ও কমিশনের চেয়ে ব্যাংকিং বুথে সেবা প্রদানের ফি, চার্জ, কমিশন প্রভৃতি কম ছাড়া বেশি হবে না। উপশাখার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগণের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়া এবং স্বল্পব্যয়ী ব্যাংকিং সেবা আউটলেটের মাধ্যমে অধিকতর আর্থিক সেবাভুক্তি নিশ্চিত করা।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পর সবচেয়ে বেশি উপশাখা খুলেছে আইএফআইসি ব্যাংক। ব্যাংকটি ৩০১টি উপশাখা খুলেছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ১৮২টি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৫৯টি, এক্সিম ব্যাংক ৫৪টি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৫৪টি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৪০টি, যমুনা ব্যাংক ৩৮, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ৩২টি, ওয়ান ব্যাংক ২৪টি, সাউথ বাংলা এ্যাগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ১৯, ঢাকা ব্যাংক ১৬টি, ন্যাশনাল ব্যাংক ১৪, প্রিমিয়ার ১২টি, এনআরবি গ্লোবাল ১২টি, আল-আরাফাহ ১১টি, ডাচ্-বাংলা ১০টি, এনসিসি ৯টি, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক ৮টি করে, ইউনিয়ন ব্যাংক ৬টি, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ৫টি, ইস্টার্ন ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক ৩টি করে এবং উত্তরা ব্যাংক ২টি উপশাখা খুলেছে। এর বাইরে সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংক ১টি করে উপশাখা খুলেছে।