ডেস্ক নিউজ
করোনা মহামারী ক্ষতি কাটিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বেগবান করতে পরিবেশবান্ধব ও গুণগত মানসম্পন্ন শিল্পায়ন জরুরি বলে মনে করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। জাতীয় মান প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ গুরু দায়িত্ব বিএসটিআই-এর ওপর বর্তায় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সব ক্ষেত্রে সঠিক ওজন ও পরিমাপক যন্ত্রের পরিমাপে সঠিকতা নিশ্চিত করতে বিএসটিআই’র কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষে বিএসটিআই’র মাধ্যমে পণ্যের হালাল সার্টিফিকেশন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিএসটিআই’র সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ল্যাবের আধুনিকায়ন ও মাঠ পর্যায়ে বিএসটিআই’র কার্যক্রম স¤প্রসারণসহ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ স্ট্যান্ডাডার্স এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) আয়োজিত বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উদযাপন উপলক্ষে “শিল্পোন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা: পণ্য ও স্বাস্থ্য সেবায় পরিমাপের গুরুত্ব” শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি এবং শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ড. মো. নজরুল আনোয়ার এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মেট্রোলজির পরিচালক প্রকৌশলী শামীমা আরা বেগম। এতে অন্যদের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় ও এর দপ্তর/সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মান প্রণয়নে বিশেষজ্ঞগণ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৃণমূল পর্যায়ে শিল্পায়নের ধারা অব্যাহত রেখে টেকসই ও সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে আজ শিল্পায়নসহ সকল ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার পূরণে সরকার জনগণের জীবন-মান উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতি রেখে পণ্য ও সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের শিল্প উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি শিল্প পণ্য উৎপাদনসহ ক্রয় বিক্রেয়ের সকল ক্ষেত্রে সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিত করাতে ভোক্তা, শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং বিএসটিআই এর প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে জিডিপিতে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির হার দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ আজ শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। শিল্পসচিব বলেন, স্বাস্থ্য-চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওজন ও পরিমাপে পরীক্ষণ যন্ত্রসমূহের সঠিকতা নির্ণয়েও বিএসটিআই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের কোন ত্রæটি থাকলে তা রোগ-ব্যাধি নির্ণয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
সঠিকভাবে ডায়াগনোসিস করা না গেলে যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব হবে না। তাই সকল ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করা জরুরি। ওজন ও পরিমাপক যন্ত্রের পরিমাপে সঠিকতা নিশ্চিতে ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাগণসহ সকলে সঠিক পরিমাপের বিষয়ে অধিকতর সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে বিএসটিআই’র কার্যক্রম আরও জোরদারের আহবান জানান তিনি।
বিএসটিআই’র মহাপরিচালক স্বাগত বক্তব্যে বলেন, মানসম্পন্ন পণ্য এবং সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিককরণে ১০ জেলায় আঞ্চলিক এবং ৩ জেলায় বিএসটিআই’র জেলা কার্যালয় স্থাপন করা হয়। এছাড়া, লোগোর নিরাপত্তা বিধানে অনলাইন কিউআর কোড সম্বলিক সার্টিফিকেট প্রদান, নতুন নতুন পণ্য পরীক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ল্যবরেটরি স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন ও পরিমাপে কারচুপিরোধে বিগত ১০ মাসে (জুলাই ২০২০-এপ্রিল ২০২১) মোট ৮৯০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ১ হাজার ৪৮৯টি মামলা দায়ের এবং ৬ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময়ে ১ হাজার ৫০৪টি সার্ভিল্যান্স পরিচালনার মাধ্যমে ৫০৯টি মামলা দায়ের করা হয়।