ডেস্ক নিউজ
হাসপাতালের যন্ত্রপাতি যাতে পড়ে না থাকে সেজন্য কেনার সময়ই সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অনেক হাসপাতালের দামি দামি যন্ত্রপাতি কেনা হলেও সেগুলো পড়ে থাকে। ফলে এর সুফল মেলে না। তাই এগুলো চালানোর জন্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠকে চট্টগ্রামের শাহআমানত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংশোধনী প্রস্তাবসহ ৬ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রোগীদের ডায়ালাইসিসের সুযোগ যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে নিউক্লিয়ার মেডিসিন চিকিৎসায় নিরাপত্তার বিষয়টি মনে রাখতে বলেছেন। এছাড়া কৃষি জমি ফেলে না রাখার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে বলেছেন দেশের কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে। সব জায়গায় চাষাবাদ করতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পের গতি বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে গুটি জাতীয় মাশরুমের বিশ্বব্যাপী চাহিদা থাকায় ফুল জাতীয় মাশরুমের পরিবর্তে গুটির দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। এছাড়া পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) সত্যজিৎ কর্মকার, মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম, ফজলুল হক, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন ও আইএমইডির সচিব আবু হেনা মোরশেদ জমানসহ অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জমি অধিগ্রহণ এবং ডিজাইনের ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ব্যয় ও মেয়াদ বেড়েছে। এছাড়া মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এর উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। কেননা এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কেননা কে যে ব্যাঙের ছাতা নামটি দিয়েছিল জানা নেই। ফলে অনেকে মাশরুমকে সেটিই মনে করে। এমএ মান্নান জানান, কৃচ্ছ সাধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তবে একনেকের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সফল হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানানো হয়।
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ৬ প্রকল্প অনুমোদন : চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংশোধনী প্রস্তাবসহ ৬ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ২ হাজার ৮১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাতীয় মহাসড়ক চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ, ব্যয় হবে ৭ হাজার ১৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের বরিশাল হতে ভোলা হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ব্যয় ১৮৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস মিটফোর্ড, কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল ও বগুড়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যয় ২১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। তবে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ চতুর্থবার সংশোধনের মাধ্যমে শুধু মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটিতে ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৪৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।
টিকাদান কার্যক্রমে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে-পিটার হাস : বাসস জানায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা এবং টিকাদান কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, এটি ‘অসামান্য দক্ষতা’ এবং ‘সত্যিই বিস্ময়কর’। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টিকাদান কার্যক্রমে বাংলাদেশ স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এটি সত্যিই বিস্ময়কর এবং দক্ষতা অসামান্য।’ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে এসে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, হাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের রূপান্তরের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘এটা খুবই চিত্তাকর্ষক।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এটি আরও উন্নত হতে থাকবে।’ মহামারির ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ‘গ্লোবাল কোভিড অ্যাকশন প্ল্যান’-এ বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব করতে চায় উল্লেখ করে হাস বলেন, ‘জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে ইউএস-বাংলাদেশের একটি মন্ত্রী পর্যায়ের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সাফল্যের বিষয়ে বলেন, তার দল এবং সহযোগী সংগঠনগুলো সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগীদের সেবা এবং ওষুধ ও অক্সিজেন বিতরণের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা কাজ করার মাধ্যমে শুরু থেকেই দক্ষতার সঙ্গে মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। তিনি বলেন, যখন ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে, তার সরকার জনগণকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের প্রথম, দ্বিতীয় এবং বুস্টার ডোজ সরবরাহ করেছে। এখন সরকার শিশুদের টিকা দিচ্ছে। এ সময় অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।