ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানীরা মধ্যম মাত্রার উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল ধানের জাত আবিষ্কার করেছেন। এ জাতের ধান ফুলফোটা পর্যায়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি হলেও আশানুরূপ ফলন দিতে সক্ষম। বর্তমানে এ সারিটি আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষণ পর্যায়ে রয়েছে।
সম্প্রতি দেশজুড়ে উচ্চ তাপমাত্রা বা হিটশকে ধানের ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চতাপ সহনশীল ধানের জাত এবং এ সংক্রান্ত গবেষণার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য রবিবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণা মাঠে ছুটে আসেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি। তিনি ভবিষ্যতে উচ্চ তাপমাত্রা জনিত বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য বিজ্ঞানীরা কি ধরনের গবেষণা করছেন মূলত সে সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভের জন্য অনেকটা আকস্মিকভাবেই ব্রি’র গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করেন। এ সময় উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনসহ ব্রি’র বিভিন্ন গবেষণা প্লট সম্পর্কে মন্ত্রীকে ব্রিফ করেন মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর।
ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর কৃষি মন্ত্রীকে জানান, বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বুঝতে পেরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৩ সাল থেকে উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণুজাত উদ্ভাবনের গবেষণা শুরু করে। ভারতের নাগিনা অর্থাৎ এন২২ (N22) ধানের জাতটি উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণু। ব্রি’র বিজ্ঞানীরা উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণু এ জাতের (N22) সঙ্গে বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় আধুনিকজাত ব্রি ধান২৮ এর সঙ্করায়ণ করে মার্কার এসিসটেড ব্যাকক্রসিং পদ্ধতির মাধ্যমে একটি অগ্রগামী সারি নির্বাচন করেছেন, যা মধ্যম মাত্রার উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল। এ সারিটি বর্তমানে আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষণ পর্যায়ে রয়েছে। ফলন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হলে এটিকে জাত হিসেবে অনুমোদনের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে আবেদন করা হবে। জাত হিসেবে অনুমোদিত হলে ফুল ফোটা পর্যায়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি হলেও এ সারিটি আশানুরূপ ফলন দিতে পারবে।
মন্ত্রী প্রায় ঘণ্টাধিককাল ধরে গাজীপুরে ব্রি’র গবেষণামাঠে উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল ধানের গবেষণা প্লটসহ ব্লাস্ট ও বিএলবি প্রতিরোধী ধানের অগ্রগামী জাত, ব্রি উদ্ভাবিত বাসমতি টাইপ ধান, হাইব্রিড ধানের গবেষণা এবং ব্ল্যাক রাইসসহ বিভিন্ন উন্নত গুণসম্পন্ন জাতের প্লটসমূহ পরিদর্শন করে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
পরিদর্শনকালে মন্ত্রী সুপার হাইব্রিড ইউএস৮৮ (US-88) এবং ব্রি উদ্ভাবিত বোরো মৌসুমের ব্রি হাইব্রিড ধান৩, ব্রি হাইব্রিড ধান৫, ব্রি হাইব্রিড ধান৮ (প্রস্তাবিত) এবং বহুল প্রচলিত হাইব্রিড এসএল-৮ (SL-8) ও তেজ গোল্ডের ফলনের তুলনামূলক পরীক্ষণ এবং ব্রি হাইব্রিড ধান৫ এর বীজ উৎপাদন প্লট পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি খাদ্য নিরাপত্তায় ব্রি’র বিজ্ঞানীদের প্রস্তুতি ও গবেষণা অগ্রগতি দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং ব্রি বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান।
এসময় বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. কৃষ্ণপদ হালদার, পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক এবং বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশজুড়ে হিটশকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য সরকার ইতোমধ্যে ৪২কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ও সহায়তা কর্মসূচীসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে দেশের মেহনতী কৃষকভাইদের এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে না হয় সেজন্যই উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল এবং রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনের বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। মন্ত্রী বর্তমানে বৈরী পরিবেশ উপযোগী বিভিন্ন সহনশীল ও পুষ্টিগুণ সম্পন্নজাত উদ্ভাবনের গবেষণা অগ্রগতি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা দেখে ব্রি’র বিজ্ঞানীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এসময় ব্রি’তে বহুল প্রত্যাশিত পেনশন স্কিম চালু করায় ব্রি’র সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় কৃষিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এর আগে সকালে কৃষিমন্ত্রী গাজীপুরের নীলের পাড়ায় কম্বাইন হার্ভেস্টারের মাধ্যমে স্কয়ার হসপিটালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডাঃ সানোয়ার হোসেনের আবাদকৃত ব্রি ধান৫০ (বাংলামতি) এর শস্য কর্তন প্রত্যক্ষ করেন।