ডেস্ক নিউজ
হেফাজতের ভণ্ড, ধর্মীয় লেবাসধারী নেতৃত্বের ব্যাপারে দেশবাসীকে সচেতন থাকা এবং কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের এদের বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন আলেম-ওলামারা। পাশাপাশি হেফাজতের এই ভণ্ডদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা। রবিবার দেশের ৬২ আলেম-ওলামা এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। মুফতি মাওলানা ড. কাফিল উদ্দীন সরকার সালেহীসহ ৬২ জনের স্বাক্ষরিত লিখিত বিবৃতিতে তারা হেফাজতে ইসলামের বর্তমান রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিদুষ্ট নেতৃত্ব বর্জনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান তারা।
বিবৃতিদাতা অন্যরা হলেন মাওলানা হোসাইন মুরতাজা, মাওলানা আজমির বিন কাসিমী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আবু তালেব আল ফারাবী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা মোরতজা আমান, মাওলানা আমিন হোসেন বিলালী, মাওলানা আব্দুল হাকিম, মাওলানা আব্দুল্লাহ, মাওলানা আব্দুর রহিম, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মাওলানা আনোয়ার হোসেন, মাওলানা বদর উদ্দিন প্রমুখ।
বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ১৬ মার্চ দেশের বেশকিছু পত্রিকায় আলেম সমাজের নামে স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে বিবৃতিটি হলো ‘হেফাজতে ইসলামের’ বর্তমান নেতৃত্বের একটি বিবৃতি। বিবৃতিটি মিথ্যা ও বানোয়াট নানা ধরনের অভিযোগযুক্ত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিবৃতিটির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তাদের (হেফাজতে ইসলাম) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের অপকর্ম, ভণ্ডামি, দেশ ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যেভাবে দেশের জনগণ এবং আলেম-ওলামারা ফুঁসে উঠেছেন তা আড়াল করা।
‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতার নামে হেফাজত ২৫-২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল। ইসলামকে তারা নিজেদের এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব কওমি মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষকদের ভুল প্ররোচণার মাধ্যমে তাদের ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাংচুর, সরকারী অফিস-আদালত, ভূমি অফিস, পুলিশ স্টেশন, বিদ্যুত অফিস, শিশুদের বিদ্যালয়, সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত যানবাহনে ও ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়েছিল। যে আগুনের তাণ্ডব থেকে আমাদের পবিত্র কোরান শরিফও রক্ষা পায়নি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, এরা মূলত ইসলামের শত্রু। ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে, ইসলামকে ব্যবহার করে আসলে তারা ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ফায়দা লোটার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম কখনই এ ধরনের জঙ্গী কর্মকাণ্ড, ধর্মের নামে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ সমর্থন করে না ও অনুমোদন দেয় না। বরং এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রচণ্ডভাবে আমাদের ধর্মবিরোধী। প্রকৃতপক্ষে হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব হচ্ছে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী, ভণ্ড ও ধর্মীয় লেবাসধারী। এদের হাতে আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলাম নিরাপদ নয়।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আপনারা জানেন হেফাজতে ইসলামের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা মামুনুল হক যিনি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সব সময় নীতি-নৈতিকতার বক্তব্য দিয়ে গরম করে রাখতেন তিনি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ছাড়া অন্য একজন নারীর সঙ্গে রিসোর্টে সময় কাটাতে গেলে স্থানীয় জনরোষের মুখে পড়েন। পরবর্তী সময়ে দেখা যায় তিনি তার প্রকৃত স্ত্রীর নাম দিয়ে এবং নিজের পরিচয় একজন প্রফেসর দিয়ে বুকিং করে ওই নারীর সঙ্গে সেখানে যান। তিনি উত্তেজিত জনগণের কাছে এ নারীকে নিজের স্ত্রী দাবি করলেও পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তার প্রকৃত স্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে এ নারীকে অন্য ব্যক্তির স্ত্রী দাবি করেন।’
তারা আরও বলেন, দেশের জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে হেফাজতের এ ভণ্ড, মিথ্যাবাদী, ধর্মীয় লেবাসধারী নষ্ট নেতৃত্বের ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য। পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাব এসব মতলববাজ, ভণ্ড ও রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক আলেমদের বর্জনের জন্য। যাতে তারা আপনাদের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করতে না পারে। একই সঙ্গে সরকারের প্রতিও আহ্বান জানাই এই ভণ্ড, মিথ্যাবাদী, ইসলামের অপব্যাখ্যাদানকারী, ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার।