ফটোগ্রাফার জিমি নেলসন পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুকিতে থাকা উপজাতিদের কেমেরাবন্দী করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন পৃথিবী জুড়ে। পুরো কাজটি শেষ করতে তার প্রায় চার বছর লাগে। তিনি একটি বই প্রকাশ করেন যার নাম “ বিফোর দে পাস এওয়ে”
এই বইটিতে এইসব বিলুপ্তপ্রায় উপজাতিদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার ডকুমেন্টেশন রয়েছে।
আজ আপনাদেরকে সেই সব ছবি থেকেই কিছু ছবি দেখাবো যা না দেখলে আপনি হয়ত এদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতেই পারতেন না। ভিডিওটি শেষ পর্যন্ত দেখুন।
১। আসারো, ইন্দোনেশিয়া এবং পাপুয়া নিউ গিনি
ইন্দোনেশিয়া এবং পাপুয়া নিউ গিনিের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় হাজার বছর ধরে বিভিন্ন উপজাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করছে। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা একে অপরের থেকে ভিন্ন। কিংবদন্তি আসারো উপজাতি সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্ব জানতে পারে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। তারা নিজেদেরকে মাটি দিয়ে আবৃত করে রাখে। তারা অদ্ভুত রকমের মুখোশ পরে থাকে ও সাথে সবসময় বর্শা বহন করে।
২। কাজাখ, মঙ্গোলিয়া
কাজাখরা হলেন তুর্কি, মঙ্গোলিক এবং ইন্দো-ইরানি আদিবাসী গোষ্ঠী এবং হুনসের বংশধর যারা সাইবেরিয়া এবং কৃষ্ণ সাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চলটিতে বসবাস করতো। তারা আধা-যাযাবর মানুষ এবং উনিশ শতক থেকে পশ্চিম মঙ্গোলিয়ার পাহাড় এবং উপত্যকায় বসবাস করেছেন।
৩। হুলি, ইন্দোনেশিয়া এবং পাপুয়া নিউ গিন
এই অঞ্চলের বৃহত্তম আদিবাসী দল হুলি উইগম্যান তাদের মুখগুলি হলুদ, লাল এবং সাদা রঙ করে রাখে এবং তারা তাদের নিজস্ব চুল থেকে অলংকার তৈরির জন্য বিখ্যাত।
৪। কালাম, ইন্দোনেশিয়া এবং পাপুয়া নিউ গিনি
কপাপুয়া নিউ গিনির কালাম আদিবাসী তাদের অনন্য এবং চিত্তাকর্ষক মাথার পাগড়ির জন্য বিখ্যাত। তারা তাদের শরীরকে বিভিন্ন উদ্ভিত থেকে তৈরি বিশেষ অলংকার দিয়ে সজ্জিত করে।
৫। গোরোকা, ইন্দোনেশিয়া এবং পাপুয়া নিউ গিনি
পাপুয়া নিউ গিনির আদিবাসী গোরোকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপে বাস করে। তারা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কারণে বিশ্বখ্যাত। গোরোকা পুরুষরা তোতা পাখির পালক দিয়ে সাজানো পাগড়ি পরে এবং স্বমুখমণ্ডল রঙ দিয়ে আবৃত করে রাখে। তারা তাদের সারা শরীরে সামুদ্রিক খোলস দিয়ে তৈরি অলংকার পরে থাকে।
৬। চুকচি, রাশিয়া
আর্কটিক এলাকার চুকচি আদিবাসী চুকোটকার উপদ্বীপে বাস করে। সাইবেরিয়ার অন্যান্য নেটিভ গোষ্ঠীর মতো, রাশিয়ান সেনাবাহিনী কোনদিনই চুকচি আদিবাসীদের সাথে যুদ্ধে জিততে পারে নি। চুকচিদের কাছে প্রাণী অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রায় ৪০০০ বছরের ও বেশি সময় ধরে কুকুর পেলে আসছে।
৭। মাওরি, নিউজিল্যান্ড
মাওরি আদিবাসীদের উদ্ভব ১৩ শ শতাব্দীতে পলিনেশিয়ার পৌরাণিক জন্মভূমি হাওয়াকিতে। মাওরিদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হল এদের শরীরের উল্কি , শিল্প ও এদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের আগমন মাওরিদের জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেললেও একবিংশ শতাব্দীতে এসে তারা এখনও টিকে আছে।
৮। হিম্বা, নামিবিয়া
হিম্বা নামিবিয়ার একটি প্রাচীন উপজাতি। তারা আধা যাযাবর এবং গবাদি পশু ও ছাগল পালন করে। তাদের চুলের স্টাইলগুলি বয়স এবং সামাজিক মর্যাদা নির্দেশ করে। পুরুষ ও মহিলা উভয়েই শরীরে প্রচুর গহনা পরে।
৯। নেনেটস, রাশিয়া
নেনেটস ইয়ামাল-নেনেটস অঞ্চলে বসবাসকারী এক আঁটসাঁট যাযাবর উপজাতি। ইয়ামাল-নেনেটস অঞ্চলকে বলা হয় “এজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড” মানে পৃথিবীর কিনারা। এখানে তাপমাত্রা -৫০ ডিগ্রি সে. এর ও নিচে নেমে যায়। এই উপজাতি সাধারণত পাহাড়ের চুড়ায় বাস করে, বল্গাহরিণের মাংশ খায় এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে পশু বলি দেয়।
১০। মাশাই, তানজানিয়া
পঞ্চদশ শতাব্দীতে যখন মাশাই সুদান থেকে চলে এসেছিল, তারা পথিমধ্যে দেখা হওয়া আদিবাসী দলগুলিতে আক্রমণ করে। এভাবে তারা রিফট উপত্যকার প্রায় সমস্ত জায়গা দখল করে নিয়েছিল। মাশাইরা হল সর্বশেষ মহান যোদ্ধা সংস্কৃতি। মাশাইদের জীবনযাত্রা পুরোপুরি তাদের গবাদি পশুগুলোর উপর নির্ভরশিল ছিল। কিন্তু এখন তাদের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন তাদেরকে শহরে শস্য, কাঠকয়লা, এমনকি মোবাইল ফোন বিক্রি করতে দেখা যায়।