প্রায় ২০০ বছর আগে ফটোগ্রাফির উদ্ভাবনের সাথে সাথেই এটি ইতিহাসের সব বিখ্যাত মুহুর্তগুলোর চিত্র ধারণে ব্যাবহার হয়ে আসছে। এই দীর্ঘ সময় ধরেই এই প্রজুক্তিটি এমন কিছু চিত্র ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে যেসব ছবির ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারে নি।
আজ আপনাদের এরকমই কিছু ছবির সাথে পরিচয় করিয়ে দেব যাদের কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারে নি।
১০। হুক আইল্যান্ড’স সি মন্সটার
১৯৬৫ সালের মার্চ মাসে রবার্ট লে সেরেক নামে একজন আলোকচিত্রী একটি অস্ট্রেলিয়ান ম্যাগাজিনে দাবি করেছিলেন যে, আগের বছর তিনি এবং তাঁর পরিবার অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের হুক আইল্যান্ডের একেবারে অগভীর উপসাগরে একটি বিশাল, ধূসর, ট্যাডপোলের মতো ‘সমুদ্র দৈত্য’ ছবি তোলেন।
১৯৬৪ সালের ১২ ই ডিসেম্বর মোটরবোটে করে রবার্ট লে সেরেক তার পরিবার এবং এক বন্ধুকে নিয়ে হুক দ্বীপের উপকূলে একটি উপসাগর অতিক্রম করার সময় উপসাগরের তলায় একটি অদ্ভুত অন্ধকারের আকার দেখতে পান। বাকিরা সকলেই বড় ট্যাডপোল আকারের এই প্রাণীটি দেখতে পায়। এটি কমপক্ষে ৩০ ফুট দীর্ঘ হওয়ার অনুমান করেন সেরেক। সেরেক তখন এই প্রানিটির ছবি তোলার জন্য কাছে যান। কিন্তু কাছাকাছি পৌঁছে তিনি দেখেন প্রানিটি ৩০ নয় প্রায় ৭০ ফুট লম্বা। সেরেক কাছে যেতেই প্রানিটি তার বিশাল বড় মুখটি খুলে সেরেকের দিকে তেঁরে আসে। সেরেক তখন সবাইকে নিয়ে মোটরবোটে পালিয়ে যান। এই প্রানিটির রহস্য এখন পর্যন্ত কেউ সমাধান করতে পারে নি।
৯। লাইট ইন হেসডালেন ভ্যালী
হেসডালেন ট্রোনডহিমের দক্ষিণ-পূর্ব অবস্থিত দুর্গম এবং তুলনামূলকভাবে নির্জন একটি উপত্যকা। ১৯৪০ এর দশক থেকে এখানে অদ্ভুত রকম আলোর খবর পাওয়া গেছে। কেউ কেউ আবার উল্লেখ করেছেন প্রায় ১০০ বছরেরও আগে থেকে এই আলো দেখা যায়। তবে ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে হেসডালেনে অস্বাভাবিক কিছু শুরু হয়েছিল – প্রতি সপ্তাহে ১৫-২০ বারের মতো এই ভুতুড়ে, বড় এবং উজ্জ্বল আলো উপত্যকার উপরে দেখা যেতে থাকে। কখনও কখনও এই আলো এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আকাশে স্থায়ী থাকতো, কখনও কখনও আলো আস্তে আস্তে চারদিকে ছড়িয়ে যেত। মাঝে মাঝে আলো খুবই দ্রুত ছোটাছুটি করে। রাডারে এই আলোর বেগ পাওয়া গেছে ৮৫০০ মি./সে. যা বিশ্বের দ্রুততম প্লেনের থেকেও ৮-৯ গুন বেশি। বর্ণালী বিশ্লেষণ করে দেখায় যে এই বস্তুটিতে সিলিকন, আয়রন এবং স্ক্যান্ডিয়াম রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখনও এই আলোর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেন নি।
৮। বাবুশকা লেডি
২২ শে নভেম্বর, ১৯৬৩। টেক্সাসের ডালাসে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসে রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডিকে দেখতে। তিনি তখন দেলি প্লাজার সামনে দিয়ে গাড়ি নিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এইদিন জন এফ কেনেডিকে হত্যা করা হয়। ফটোগ্রাফাররা সেদিন অনেক ছবি তোলে। সেসব ছবি থেকে যারা সেদিন রাস্তায় দাড়িয়ে ছিল তাদের সবার পরিচয় খুজে বের করা সম্ভব হয়েছিল শুধু একজন ছাড়া। বেশ কয়েকটি ছবিতে একটি মহিলাকে দেখা যায় রাশিয়ান স্কার্ফ মাথায়। তার হাতে একটি ক্যামেরা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে সনাক্ত করা যায় নি। তাকে “বাবুশকা লেডি” নামে সম্বোধন করা হয়। তিনি মেইন স্ট্রিটসের মধ্যে ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং জেএফ এর গুলিবিদ্ধ হওয়ার মুহুর্তের চিত্রগ্রহণ করেন। আজ ৫৬ বছর পরও জানা সম্ভব হয় নি সেই রহস্যময়ী মহিলা কে ছিল এবং সে জন এফ কেনেডির গুলিবিদ্ধ হবার কি ছবি তুলেছিল।
৭। দ্য ফলিং ম্যান
এই ছবিটি ১১ ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার দিনে ফটোগ্রাফার রিচার্ড ড্রিউ তোলেন। ছবিটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পরে। অনেকে লোকটির অদ্ভুত শরীরের অবস্থানটি উল্লেখ করেছেন: তিনি প্রায় সোজা হয়ে পড়েছেন, যা অত্যন্ত কঠিন। ফটোতে থাকা ব্যক্তির পরিচয়টি কখনও পাওয়া যায়নি , যদিও অনেক আমেরিকান দাবি করেছেন যে এই ছবিটির ব্যাক্তি তাদের আত্মীয়।
৬। ট্যাঙ্ক ম্যান
এই ছবিটি ১৯৮৯ সালের দাঙ্গার সময় বেইজিংয়ে তোলা হয়েছিল। তিয়ানানমেন স্কোয়ারে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি রাস্তা ব্লক করে ট্যাঙ্কের সারির সামনে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। ছবিটি বিশ্বের বিখ্যাত সব ম্যাগাজিনের প্রথম পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছিল। কিন্তু আমরা এখনও সেই ব্যক্তির নাম বা তার কী হয়েছিল তা জানি না।
৫। এ সেল ফোন ইন চ্যাপলিন’স মুভি
২০১০ সালে, চার্লি চ্যাপলিনের ১৯২৮ সালের সিনেমা দ্য সার্কাসের শুটিং এর বোনাস ফুটেজ সহ একটি ডিভিডি প্রকাশিত হয়েছিল। ফুটেজগুলির মধ্যে একটিতে একজন মহিলাকে সেল ফোনের মতো কিছু ধরে রাখতে দেখা যায়। পরিচালক জর্জ ক্লার্ক দাবি করেছেন যে এই ছবিটি টাইম ট্রাভেলের প্রমান। এদিকে, অনেকেই এটাকে মার্কেটিং ছাড়া আর কিছুই মনে করেন নি।
৪। এস্ট্রোনাট ফ্রম সলওয়ে ফর্থ
১৯৬৪ সালে, জিম টেম্পলটন তার ৫ বছরের কন্যার ছবি তোলেন। এবং যদিও টেম্পলেটনরা দাবি করেছেন যে তাদের ব্যতীত আর কেউ সেখানে ছিল না, ছবিটি ডেভেলপ করার সময় ছবটিতে মেয়েটির মাথার পিছনে নভোচারীর মতো একটি আকার দেখা যাচ্ছিল। পরবর্তী বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ছবিটিতে কোনরকম সম্পাদনা করা হয় নি।
৩। স্যার গড্ডার্ড’স স্কোয়াড্রন
স্যার গড্ডার্ড, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তার স্কোয়াড্রনের ফটো অ্যালবামের মধ্যে একটি অদ্ভুত ফটোগ্রাফ রয়েছে। ছবিটি ডেভেলপ করার পর, স্কোয়াডের সমস্ত সদস্যরা পিছনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ব্যক্তিকে তাদের বন্ধু ফ্রেডি জ্যাকসন হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন, যে ছবি তোলার দুই দিন আগে মারা গিয়েছিল। ফ্রেডির শেষকৃত্যের দিন স্কোয়াড্রনটির ছবি তোলা হয়েছিল।
২। পিরামিডস অন দ্যা মুন
এই ছবিটি “অ্যাপোলো -17” মিশনের সময় তোলা হয়েছিল এবং এটি ওভার এক্সপোসড ছবি হিসেবে আর্কাইভে সংরক্ষিত ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা ছবিটির কন্ট্রাস্ট নিয়ে কাজ করার পরে, তারা পিরামিডের মতো আকার ছবিটিতে খুজে পান। এটি অনেক লোককে বিশ্বাস করায় যে চাঁদে পিরামিড রয়েছে।
১। দ্য টাইম ট্রাভেলিং হিপস্টার
এই ছবিটি ১৯৪১ সালে কানাডার সাউথ ফোর্কস ব্রিজ পুনরায় চালু করার সময় তোলা হয়েছিল। প্রথম দেখায় এটিকে সাধারণ কোনও ছবির মতো মনে হচ্ছে, তবে আপনি যদি একটি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন তবে অদ্ভুত কিছু লক্ষ করবেন। ছবিটিতে ১৯৪০ এর দশকের টুপি এবং স্যুট জ্যাকেটের মধ্যে আধুনিক পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি রয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি সম্ভবত একটি আধুনিক ক্যামেরা ধারণ করেছেন, অদ্ভুত চশমা পরেছেনা। এই সবকিছু তখনকার সময়ের সাথে পুরোপুরি খাপ খায় না।