ডেস্ক নিউজ
২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে প্রায় ৫শ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ৫২ হাজার ৫২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এনবিআরের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় এসব তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরের রাজস্ব আহরণের চিত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯৭ হাজার ৫০৭ কোটি ২২ লাখ টাকা, আয়করে ৮৫ হাজার ২২৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা, কাস্টমসে ৭৭ হাজার ১৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার কোটি টাকা কিন্তু আহরণ হয় ৫২ হাজার ৫২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা, আদায় হয়েছিল ৬২ হাজার ৪২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, বিপরীতে আদায় হয় ৭৯ হাজার ৪০৩ কোটি ১১ লাখ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরের ৯২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর আদায় করে ৯৫ হাজার ৫৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি রাজস্ব আদায় হয়। এরপর ২০১২-১৩ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা, আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৯ হাজার ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। পরের বছর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, এনবিআর আদায় করেছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৮১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা কিন্তু এনবিআর আদায় করেছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। আদায় হয় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এ বছরও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করে এনবিআর।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজস্ব আহরণে নানান উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আকর্ষণ সৃষ্টি করা। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কাজ করছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটি অটোমেশনে যাচ্ছে তারা। রাজস্ব আহরণের উদ্দেশ্যে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডাটা ইনটিগ্রেশনে যাওয়া, সেবা সহজ করা এবং মানের উন্নয়ন করা। সবশেষ রাজস্ব আহরণে দক্ষ জনবল তৈরি করতেও কাজ করছে এনবিআর।
পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর আদায় করে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা কম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা কিন্তু এনবিআর আদায় করে ২ লাখ ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি কম আদায় হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আদায় হয় ২ লাখ ২০ হাজার ৭৭১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি বেশি হলেও গত অর্থবছরের চেয়ে রাজস্ব আহরণ ১৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বেশি আহরণ হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকা। যার বিপরীতে এনবিআর আদায় করে ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। অপরদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা কিন্তু রাজস্ব আদায় হয় ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বিগত অর্থবছরের চেয়ে ৪৩ হাজার ৪৩০ কোটি ৪ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়। সবমিলে বর্তমান সরকারের আমলে ১৩ বছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫০০ শতাংশ।
এনবিআরের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বিষয়ে সম্প্রতি এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো রহমাতুল মুনিম সংবাদিকদের বলেন, শুধু রাজস্ব আহরণই এনবিআর মুখ্য কাজ নয়। ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি এবং ব্যবসায়ের উন্নয়নেও কাজ করে থাকে এনবিআর বলেও জানান সরকারের এই সিনিয়র সচিব।