ডেস্ক নিউজ
গত এক মাসে ৩৭ জনের চাকুরি গেছে, আরও ৮০ জনের চাকুরি যাবে। এরপরেও যারা থাকবেন তাদের আবার বেতন কমবে! এসবের প্রতিবাদ করায় চাকরি ছাড়তে হয়েছে প্রথম আলো অনলাইনের নির্বাহী সম্পাদককেও!
সেলিম খান। প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক ও সর্বশেষ অনলাইনের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৯ সাল থেকে প্রথম আলোয়। প্রচণ্ড প্রতাপশালী এই মানুষটাকে প্রথম আলোর চাকুরি ছাড়তে হয়েছে। তিনি পদত্যাগ করেছেন। অথচ গত বিশ বছরে ২০ দিনও তিনি ছুটি কাটিয়েছেন কী না কে জানে। এই মানুষটা নিজ হাতে প্রথম আলো অনলাইনটা গড়েছেন।
সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর নাতি সেলিম খান। সাংবাদিক আবেদ খান, তোয়াব খান সবাই একই বংশের। সেলিম ভাইয়ের জন্য কষ্ট লাগছে।
অবশ্য গত কয়েকদিনে চাকুরি গেছে আরও অনেকের। শুনলাম অন্তত ৩৭ জন। এর মধ্যে আমার বন্ধু কৌশিক আহমেদ আছে, আছে আবুল হাসান, মিজান মালিক। প্রত্যেকেই দারুণ কাজ করে। রিপোর্টারদের মধ্যে মামুনুর রশিদ মামুম, মুসা আহমেদসহ আরও অনেকের চাকুরি গেছে।
সাংবাদিকদের বাইরে প্রথম আলোর সদা হাস্যজ্জল মানুষ আবদুল্লাহ ভাইয়ের চাকুরি গেছে। শান্তশিষ্ট লিপি আপা যে তার কন্যা সন্তানকে নিয়ে প্রথম আলোর টেলিফোন অপারেটরের চাকুরিটা করে জীবন নির্বাহ করতো তার চাকুরিও গেছে। সবসময় হাসিমুখে থাকা প্রথম আলোর ভক্ত সোনিয়া আপা কিংবা ছোট পদে চাকুরি করা অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আমার আরেক প্রিয় মানুষ ফিচার সম্পাদক শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিনের ছেলে জাহিদ রেজা নুর ভাই প্রথম আলো ছেড়েছেন। সারাক্ষণ পরিশ্রম করা অসম্ভব সৎ মানুষ হাফিজুর রশিদ হিরন ভাইসহ আরও অনেককে চাকুরি ছাড়তে হয়েছে গত বছরই।
গত এক মাসে ৩৭ জনের চাকুরি গেছে। শুনলাম আরও ৮০ জনের চাকুরি যাবে। এরপরেও যারা থাকবেন তাদের আবার বেতন কমবে। কথা হলো এই মানুষগুলোর চাকুরি না থাকলে আমার কী যায় আসে? আমি তো এখন প্রথম আলোতে নেই এবং ভালোই আছি। তাহলে কেন প্রথম আলোর সাংবাদিক বা যে কারও চাকুরি গেলে আমার মন খারাপ হয়? আমার কান্না আসে?
ভীষণ মন খারাপ হয় কারণ আমার তারুণ্যের ১২ টা বছর গেছে এই প্রথম আলোতে। যে মানুষগুলোর কথা বললাম তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। একযুগ। কাজেই এই মানুষগুলোর চলে যাওয়া আমাকে কষ্ট দেয়।
দুই মাস আগে আমি লিখেছিলাম, করোনা পরিস্থিতির অজুহাতে এক তৃতীয়াংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ও শীর্ষ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান দৈনিক প্রথম আলো। এজন্য প্রথম আলোর সব বিভাগীয় প্রধানদের একটি চিঠি দিয়ে দ্রুত ছাঁটাই যোগ্য কর্মীদের তালিকা দিতে। ডেডলাইন বেঁধে দেয়া হয়েছে ২৯জুন। জুলাই থেকে ছাঁটাই কার্যক্রম শুরু হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমার প্রথমে ঘটনা বিশ্বাস হয়নি। আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান, ভালোলাগার প্রতিষ্ঠান, ভালোবাসার প্রতিষ্ঠান প্রথম আলো। আমার জীবনের,আমার তারুণ্যের সেরা ১২ টা বছর কেটেছে প্রথম আলোতে। ২০০৫ থেকে ২০১৭। আমার জীবনের সেরা এক সময়।
না এমন নয়, আমার অন্য কোন পেশায় যাওয়ার সুযোগ ছিল না। অনার্স-মাস্টার্স দুটোতেই প্রথম শ্রেণী ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়াটা খুব কঠিন ছিল না। চাইলে বিসিএস বা সরকারি চাকুরির লড়াইয়ে নামতে পারতাম। কিন্তু এসব দিকে না গিয়ে আমি ভালোবেসে সাংবাদিকতাকেই আমার পেশা হিসেবে নিয়েছিলাম।
অবজারভার, বাংলানিউজ, বিডিনিউজ হয়ে ২০০৫ সালে আমি যোগ দেই প্রথম আলোয়। এরপর টানা ১২ বছর কখন গেছে, কীভাবে দিন বা রাত গেছে বলতে পারবো না। কারণ ভালোবাসে কাজ করেছি। মতি ভাই আমাদের ভীষণ আদর করতেন। অসাধারণ একটা টিম ছিলো। তারপরেও জীবনের তাগিদেই ২০১৭ সালের জুলাই মাসে আমি হুট করে প্রথম আলো ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই। নিয়মিত যোগাযোগ না থাকলেও প্রথম আলোর সাবেক সব সহকর্মীদের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক।
একযুগ কাজ করেছি বলে প্রথম আলোর প্রায় প্রত্যেক সাংবাদিক এবং সহকর্মীকে আমি চিনি। এদের প্রায় প্রত্যেকেই দারুণ সৎ মানুষ। এদের প্রায় সবার অন্য কিছু করার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা ভালোবেসে প্রথম আলোয় ছিল। আজকে তাহলে কেন তাদের চাকুরি যাবে?
অবাক কাণ্ড হলো, এই যে এতো লোকের চাকুরি যাওয়ার খবর নিয়ে সেখানকার সবাইকে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কোথাও কথা বলা যাবে না। ফেসবুকে লেখা যাবে না। যখন যাকে বলা হবে তিনি পদত্যাগ করে চলে যাবেন। কেউ মতি ভাইয়ের সামনে একটা টু শব্দটাও করবে না। আমি অবাক হয়ে ভাবি কী করে সম্ভব? মতি ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক করা যাবে না?
অথচ আমার মনে আছে, ২০০৫ সালে প্রথম আলোয় যোগ দেওয়ার কয়েকদিন পর আমি সম্পাদককে কঠিন সব প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি অবাক হয়ে পরের মিটিংয়ে বলেছিলেন, এই অফিসের সবচেয়ে তরুণ সাংবাদিকটা আমাকে মুখের উপর এই কথাগুলো বলেছে এবং আমি মনে করি সে ঠিক বলেছে।আমার ১২ বছরের প্রথম আলোর জীবনে সবসময় তর্ক করেছি, প্রশ্ন করেছি, কোন অন্যায় দেখলে চিৎকার করেছি। চাকুরি ছাড়ার আগেরদিনও আমি মতি ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক করেছি, প্রশ্ন করেছি।
সত্যি বলছি, এই যে সবসময় তর্ক করেছি, প্রতিবাদ করেছি আমার কখনো ভয় লাগেনি আমার চাকুরি চলে যাবে। বরং আমার মনে হয়েছে, মতি ভাই যৌক্তিক কথা শুনবেন। তিনি শুনেছেনও। আজকে যখন শুনি কেউ প্রতিবাদ করে না, মতি ভাইয়ের সামনে কেউ কথা বলে না আমি ভীষণ অবাক হই। সংবাদপত্র অফিসে তর্ক-মত-ভিন্নমত থাকবে না? তাদের চাকুরি গেলেও কথা বলা যাবে না?
প্রথম আলোর প্রায় সব সাংবাদিক এবং নানা বিভাগের সব কর্মীরা আমার ফেসবুকে আছেন। না কেউ ইনবক্স করে না। কেউ কোন কথা বলে না। কারণ সবাই ভয়ে আছে। আমি খুব বিস্ময়ে ভাবি প্রতিষ্ঠানের একজন সহকর্মীর চাকুরি চলে যাওয়ার কষ্টটা বুকে চেপে এরা কাজ করে কী করে? নিজের সহকর্মীদের এই বেদনার কথা যারা লিখতে পারে না তারা কী করে সমাজের নানা অন্যায়ের কথা লিখবে? আর কেউ কথা বলতে পারবে না কেন? এটা কী পত্রিকা অফিস না জেলখানা?
দুই মাস আগে লিখেছিলাম, প্রিয় মতি ভাই, কোন সন্দেহ নেই করোনা আমাদের কঠিন এক সংকটে ফেলেছে। সারা বিশ্বেই গণমাধ্যম সংকটে। সার্কুলেশন কমে গেছে, বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেছে সবই সত্য। কঠিন এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে সেটাও সত্য। কিন্তু মতি ভাই, এভাবে তালিকা করে ছাঁটাই কোন মানবিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। কখনোই না। আর মতি ভাই প্রথম আলোর লোকজন ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত তো করোনার আগের। করোনাকে কী শুধুমাত্র অজুহাত করা হচ্ছে না?
মতি ভাই, আমি বা আমরা সবসময় গর্ব করে বলি, প্রথম আলো সাংবাদিকদের জন্য আদর্শ। আমার ১২ বছরে কোনদিন নির্ধারিত তারিখের পর একদিন দেরি হয়নি বেতন পেতে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যম যেখানে ওয়েজবোর্ড দেয় না প্রথম আলো দিতো। অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরি ছাড়ার পর যেখানে প্রাপ্য পেতেন না সাংবাদিকরা তখন প্রথম আলো দ্রুততম সময়ে প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতো। এই দেশে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের সবার মনে মনে স্বপ্ন থাকে প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারে কাজ করা। আজকে এসব প্রতিষ্ঠানে যদি ছাটাই আতঙ্ক শুরু হয় লোকে যাবে কোথায়?
মতি ভাই, অনেকবার বলেছি- যে সংকট চলছে আপনি যদি সবার সঙ্গে আলোচনায় বসেন সেই সংকটের সমাধান করা সম্ভব। মতি ভাই বলেন তো একজন টেলিফোন অপারেটর কতো টাকা পায়? আর প্রথম আলোর গত ২২ বছরে সাংবাদিক বা রিপোর্টারের সংখ্যা কী বেড়েছে? আমি তো আমার ১২ বছরে দেখেছি রিপোর্টার ২৫-৩০ জনই আছে। ডেস্কে ৩০-৩৫ জন। কিন্তু প্রশাসন, বিজ্ঞাপনসহ নানা বিভাগে শত শত লোক। তখন কিন্তু বলেছিলাম কেন এতো লোক নিয়োগ দিলেন? কেন কোটি কোটি টাকা দিয়ে সোনারগাঁয় জমকালো আয়োজন বা মেরিল প্রথম আলো?
মতি ভাই, আপনাকে আমি আদর্শবান নেতা বা আদর্শবান সম্পাদক মনে করি না কিন্তু আমি এখনো বিশ্বাস করি বাংলাদেশের সেরা সংবাদ ব্যবস্থাপক আপনিই। আমি এখনো বিশ্বাস করি কাউকে ছাঁটাই না করে সংকটের সমাধান করা সম্ভব। যে লোক আড়াই লাখ টাকা বেতন পায় আপনি তাকে দুই লাখ করে দেন। ৫০ হাজার টাকা কম হলেও সে চলতে পারবে, একটু খরচ কমিয়ে। কিন্তু যার বেতন ৫০ হাজার তার চাকুরি চলে গেলে কী হবে?
মতি ভাই, দেখেন প্রথম আলোর এক কপি সার্কুকেলেশন যেন না কমে সে কারণে আমি একদিনের জন্যও প্রথম আলো নেয়া বন্ধ করিনি। আবার টাকা দিয়ে ই পেপারেও গ্রাহক। আপনি বলেন আমরা কোনভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি। আপনি সংকটের সমাধান করতে না পারলে ট্রান্সকমকে বলেন। নিজে না পারলে দেশবাসীর সহায়তা চান। সবাই মিলে আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াই। আর কাউকে ছাঁটাই করতে হলে তাকে ট্রান্সকমে একটা চাকুরির ব্যবস্থা করে দেন।
মতি ভাই, আপনাকে আমি বলবো আপনি প্রথম আলোর সব রিপোর্টার, সব সাংবাদিকদের নিয়ে বসেন। আমি নিশ্চিত কোন একটা উপায় বেরিয়ে আসবে। আমাদের সাংবাদিক কর্মীরা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক কোন দাবি করবে না।
আরেকটা কথা, আমি কিন্তু জানি প্রথম আলো ১৭ বছর ধরে লাভ করেছে। কোন কোন বছর একশ কোটি টাকাও লাভ করেছে। মতি ভাই, আপনি নিজে প্রথম আলোর মালিকদের একজন। তার মানে আপনিও লাভ পেয়েছেন।
এই যে যখন কোটি কোটি টাকা লাভ হয়েছে তখন কী সাংবাদিকরা এক টাকা বেশি পেয়েছে? অথচ শ্রম আইন অনুসারে বছর শেষে প্রতিষ্ঠানের লাভের নুন্যতম ৫% শ্রমিকদের দিতে হয়। ১৭ বছর লাভ করা প্রথম আলো তো তা দেয়নি। তাহলে আজ লসের দায়ভার তাদের ওপর চাপাচ্ছেন কেন? মতি ভাই, আপনার জায়গায় আমি হলে নিজের আর পরিবারের সম্পদ বেঁচে হলেও, নিজের লাভ কমিয়ে হলেও ছাটাই বন্ধ করতাম। সততা, আদর্শ, মানবিকতা না থাকলে সম্পাদক হওয়া মানায় না মতি ভাই।
মতি ভাই, আমি বিশ্বাস করি সবাইকে সাথে নিয়ে আপনি কোন না কোন উপায় বের করতে পারবেন। দয়া করে নিজেকে খারাপ গার্মেন্টস মালিকদের কাতারে নামাবেন না। আর পারলে প্রথম আলোর লাভ ক্ষতির হিসেব তাহলে জাতির সামনে তুলে ধরুন। আচ্ছা এতো এতো কর্মীদের অভিশাপে প্রথম আলো টিকবে তো? নাকি আপনি চাইছেন আপনার মৃত্যুর সাথে সাথে প্রথম আলোরও মৃত্যু ঘটুক?
শুধু প্রথম আলো নয়, আমি দেশের সব গণমাধ্যম মালিক ও সম্পাদকদের বলবো, ছাঁটাই করবেন না। আমি রাষ্ট্রকেও এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলবো। বিশেষ করে আমাদের তথ্য মন্ত্রণালয়কে। গণমাধ্যমের এই সংকট কীভাবে মোকাবেলা করা যায়, কীভাবে আপনারা রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা করতে পারেন সেসব ভাবুন। একইসঙ্গে আমি আমাদের সাংবাদিক নেতাদেরও বলবো আপনারাও সোচ্চার হন। কথা বলুন। সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিন। নয়তো ইতিহাস কখনো ক্ষমা করবে না আপনাদের।
আরেকটা কথা। প্রথম আলোয় আমার সব সাংবাদিক বন্ধুদের বলবো, আপনার পাশের মানুষটার জন্য কথা বলুন। নয়তো কাল আপনারও একই পরিস্থিতি হবে। আপনারা যারা আজ ছাঁটাইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের বলবো, ভাবুন। সেলিম খানের যদি প্রথম আলো ছাড়তে হয় তাহলে আপনি যতোই ঘনিষ্ঠ হন না কেন আপনাকেও ছাড়তে হবে একদিন।
মনে রাখবেন, আজকে আপনার পাশের লোকটি বিপদে পড়লে কাল আপনিও একই বিপদে পড়তে পারেন। কাজেই শুধু নিজের স্বার্থ না ভেবে সবাইকে নিয়ে চলুন বাঁচতে শিখি। ভয় ভেঙে কাজ করতে হবে, দুরন্ত সাহস, মত প্রকাশের অঙ্গীকার আরও কতো কথাবার্তা আপনাদের । তাহলে আপনারা কেন নিজেদের উপর হওয়া অন্যায় নিয়ে চুপ থাকবেন?
আপনারা যারা লতাপাতা পাখি ফুল বা রাষ্ট্রের নানা অনিয়ম নিয়ে স্ট্যাটাস দেন তাদের বলবো, নিজের সহকর্মীদের সঙ্গে অন্যায় নিয়ে কথা বলুন। সবাই মিলে মতি ভাইকে বলুন, মতি ভাই এভাবে রোজ রোজ লোকজনকে ছাঁটাই না করে একবারে বলুন, আমরা সবাই মিলে চলে যাই। মনে রাখবেন খেয়ে পরে বাঁচতে খুব বেশি কিছু লাগে না। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা কেউ না খেয়ে মরবেন না।
কেউ কেউ জিজ্ঞেস করতে পারেন, আপনি তো প্রথম আলোতে নেই। আপনি তো ভালো আছেন। তাহলে কেন এসব নিয়ে ভাবছেন। আমি বলছি, কারণ, আমার সত্ত্বায় সাংবাদিকতা। আর এই মানুষগুলোর সঙ্গে আমি একযুগ কাজ করেছি। আমি কথাগুলো বলছি, কারণ এই দেশের সাংবাদিকতা আর গণমাধ্যমগুলো টিকে থাকুক। দেশের স্বার্থে এটা জরুরী।
হ্যাঁ, এটা ঠিক এই কথাগুলো বলার কারণে আমার অনেক ক্ষতি হতে পারে, আমি অনেক জায়গায় নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারি, এমনকি যদি আমার জীবনও দিতে হয় তাও আমি কথাগুলো বলবো। এই দেশের জন্য বা সাংবাদিকতার জন্য মরতে বা জেলে যেতে আমি ভয় পাই না। বরং কথাগুলো না বললে বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবো।
শেষ করছি কবিতার দুটো লাইন দিয়ে। আজ দুপুরেই কবি শ্রীজাত’,র দুটো লাইন লিখেছি। আবারও সবাইকে মনে করিয়ে দেই,
মানুষ থেকেই মানুষ আসে
বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়।
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ভালো থাকুক দেশের সব সাংবাদিকরা, আমার সব সহকর্মীরা। ভালো থাকুক বাংলাদেশ।