দেশে এখন পর্যন্ত ১৮টি ফসলের ১১২টি জাত আবিষ্কার করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত সংস্থা বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। কৃষকদের সুবিধার্থে অধিক ফলন পেতে এসব প্রযুক্তি ও জাত মাঠ পর্যায়ে আরও বেশি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বক্তারা। সেই বিনা উদ্ভাবিত এসব জাত ও প্রযুক্তি বিষয়ে বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের একত্রে কাজ করারও আহ্বান জানান।
শনিবার রাজধানীর খামারবাড়ী সংলগ্ন আ. কা. মু মিলকি অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) আয়োজিত ‘বিনা উদ্ভাবিত সম্প্রসারণযোগ্য প্রযুক্তিসমূহের পরিচিতি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আসাদুল্লাহ বলেন, বিনা উদ্ভাবিত কিছু ধানের জাত আছে কিছু ডাল জাতীয় ফসলের জাত আছে এসব আরও সম্প্রসারণ দরকার। বিশেষ করে বিনা ১৬ বিনা ১৭ ধান ব্যাপক ভাল কাজ করছে কৃষকরাও চাষ করে সুফল পাচ্ছে। বিনা ধান-১৭ খরা সহিষ্ণু স্বল্পমেয়াদী। সার কম লাগে উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন আমন ধানের জাত। লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের সকল রোপা আমন অঞ্চল বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জাতটির অধিক ফলন পাওয়া যায়। একই সঙ্গে বিনা ধান-১৬, স্বল্পমেয়াদী জীবনকালও অধিক ফলনশীল আমন ধানের জাত। লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের সকল রোপা আমন অঞ্চল বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জাতটির অধিক ফলন পাওয়া যায়। বিনা ধান-১১ বন্যা সহিষ্ণু, ও অধিক ফলনশীল আমন ধানের জাত। এ জাতটি ২৫ দিন পর্যন্ত পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। এসব জাত মাঠ পর্যায়ে আরো ব্যাপক প্রচার করতে হবে। বিজ্ঞানী কর্মকর্তাদের একত্রে কাজ করতে হবে বলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে করতে হবে এসবই কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাজ। আমাদের কৃষির অনেক উন্নয়ন হয়েছে সামনে সেই ধারা বজায় রাখতে সবাইকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান। এ সময় বিনাকে আরও বেশি কর্মশালা করে কর্মকর্তাদের অবহিত করতে বলেন। বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, আমাদের উদ্ভাবিত জাতগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট আছে। আমাদের অনেকগুলো জাত মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং কৃষকরাও বেশ উপকৃত হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন ফসল নিয়ে কাজ করছি সামনে আমাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আরও বেশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে। বক্তারা বলেন, প্রকৃৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশের কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করে যাচ্ছেন। আমরা বিজ্ঞানীরা এসব প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সহনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে কৃষকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক এ কে এম মনিরুল আলম, বিনার পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা) ড. মোঃ জাহাঙ্গীর অঅলম, বিনার পরিচালক (প্রশাসন) ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। এসম বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কর্মকর্তারা কর্মশালায় অংশ নেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন ফসলের বিভিন্ন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কৃষিতে ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। বিনার প্রায় ৫০টির মতো মাঠ পর্যায়ে আছে। বিনা উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে ধানের ২৪টি, তেল ফসল ৩০টি, ডাল ফসল ৩৩টি, গম ১টি, পাট ২টি, সবজি ১৪টি, মসলা জাতীয় ৬টি এবং লেবু জাতীয় ২টি জাত উদ্ভাবন করেছে।