ডেস্ক নিউজ
নোয়াখালী সদর উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে ২০০৫ সালের ২ এপ্রিল গঠিত হয় সুবর্ণচর উপজেলা। আয়তন ৫৭৬.১৪ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ৮৯ হাজার। নোয়াখালী জেলার নতুন উপজেলা এটি। এক সময় সুবর্ণচরের অস্তিত্ব ছিল না। ১৯৭০ সাল থেকে ধীরে ধীরে বনায়নের মাধ্যমে এই উপজেলার সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে চলমান প্রকল্পের আওতায় গ্রিন বেল্টের মাধ্যমে ২০২১ সালেই দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ২৫০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি যুক্ত হবে বলে জানিয়েছে বন অধিদপ্তর।
সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে নতুন চর জেগে ওঠে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এগুলো অনেক সময় হারিয়ে যায় সাগরের গর্ভে। তাই নতুন চর স্থায়ীকরণের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় ২৫০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে বন অধিদপ্তর। নতুন চর জেগে ওঠার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিককরণের পাশাপাশি স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কয়েক লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। জেগে ওঠা চর রক্ষায় ২৫ হাজার হেক্টর উপকূলীয় বনায়ন, ৪০ হাজার বসতবাড়ি বনায়ন ও চরে স্ট্রিপ বনায়ন করা হবে। প্রতি হেক্টরে ৪ হাজার ৪৪৪টি কেওড়া, বাইন, কাঁকড়া ইত্যাদি ম্যানগ্রোভ প্রজাতির চারা রোপণ করা হবে। চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ১ দশমিক ৫ মিটার। চারাগুলো সারি আকারে রোপণ করা হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ১ দশমিক ৫ মিটার।
বসতবাড়িতে নারিকেল, সুপারি, তাল, খেজুরসহ বনজ ও ফলজ চারা রোপণ করা হবে।
বন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা নতুন চরসহ উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূল জুড়ে সবুজ বেষ্টনী সৃজন এবং দেশের আয়তন বৃদ্ধি করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অভিযোজন এবং নেতিবাচক প্রভাব হ্রাসে ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে কার্বন মজুদ বৃদ্ধি করা হবে। আবাসস্থল এবং প্রজনন সুবিধার উন্নয়নের মাধ্যমে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্পের আওতায় বনায়ন শুরু হয়েছে। মূলত উপকূলীয় এলাকায় পানির মধ্যে বনায়ন শুরু হয়েছে। বনায়নের ফলে গ্রিন বেল্ট তৈরি হবে। ফলে একদিকে উপকূলীয় এলাকা নিরাপদ থাকবে অন্যদিকে ভূমি বাড়বে। যেমন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ বঙ্গোপসাগর দিয়ে মূলত বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রবেশ করেছে। প্রবেশের সময় ঘূর্ণিঝড়ের একপাশে ছিল পশ্চিমবঙ্গ, আর সুন্দরবন ছিল তিন পাশে। সুন্দরবন অতিক্রম করতে ঘূর্ণিঝড়ের দীর্ঘসময় লাগে ও গতি কমে আসে। ফলে পূর্ণ শক্তি নিয়ে বুলবুল বাংলাদেশের স্থলভাগে আঘাত করতে পারেনি। একইভাবে গ্রিন বেল্টের মাধ্যমে উপকূল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে।
অন্যদিকে বনায়নের ফলে সেডিমেন্ট জমা হতে হতে এক সময় মাটি উঁচু হবে। এসব স্থানে জোয়ারের পানি উঠবে না এবং সবুজ ঘাস জন্ম নেবে। ফলে স্থায়ী ভূমিতে রুপ নেবে উপকূলে জেগে ওঠা চর।
বন অধিদপ্তরের উপপ্রধান (বন সংরক্ষক) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকল্প সঠিকভাবে এগিয়ে চলছে। ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যা নেই। আমাদের অন্যতম টার্গেট ২০২১ সালের মধ্যেই ২৫০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি বৃদ্ধি করে ভূমি মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া। এক সময় সুবর্ণচর ছিল না, বনায়নের মাধ্যমেই এটা সৃষ্টি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প চলমান। সুন্দর মতো কাজ চলছে। লক্ষ অর্জিত হবে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য গ্রিন বেল্ট তৈরি করা। এর ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। দেশের জন্যই গ্রিন বেল্ট তৈরি করছি। এটা একটা ন্যাচারাল ব্যারিয়ার।’
মূল ভূমি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বনায়ন করছি নরম কাদা মাটিতে। ফলে এক সময় পলি বেশি জমা হয়ে মাটি উঁচু হবে। এক সময় জোয়ারের পানি উঠবে না। তখন ঘাস হবে এভাবে সুবর্ণচরের মতো ২০২১ সালেই ২৫০ বর্গ কিলোমিটার জমি ভূমি মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দিতে পারবো।’
প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ১০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদী হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রাপথে প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করে। এ পলি উপকূলের কাছাকাছি ক্রমান্বয়ে জমা হয়ে নদী ও বঙ্গোপসাগরের তলদেশের উচ্চতা বাড়িয়ে চরের সৃষ্টি করে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় গত দুই দশকে ২ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি নতুন চরের সৃষ্টি হয়েছে। এসব চরের ভূমিকে স্থায়ী রূপ দিতে বনায়ন করা প্রয়োজন, যা জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধ করবে। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এবং কৃষিপ্রধান দেশে জেগে ওঠা নতুন চর ভূমির স্থায়ীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজে ম্যানগ্রোভ বনায়ন কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
যেসব স্থানের নতুন চরে বনায়ন করা হবে সেগুলো হচ্ছে- পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলা, দশমিনা, দুমকি, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী সদর ও রাঙ্গাবালী উপজেলা। বরগুনা জেলার আমতলী, বামনা, বরগুনা সদর, বেতাগী, পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলা। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা। ভোলা জেলার ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন, দৌলতখান, লালমোহন, মনপুরা এবং তজুমুদ্দিন উপজেলা। নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, চাটখিল, কোম্পানিগঞ্জ, হাতিয়া, সেনবাগ, নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর, সোনাইমুড়ি ও কবিরহাট উপজেলা। লক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলগঞ্জ উপজেলা। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, দাগনভূঁইয়া, ফেনী সদর, পরশুরাম, ফুলগাজী ও সোনাগাজী উপজেলা। চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, হাটহাজারী, লোহাগড়া, পাহাড়তলী, পটিয়া, রাউজান, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রাম সদর উপজেলা। কক্সবাজার জেলার রামু, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া এবং পেকুয়া উপজেলা।