ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি আশা প্রকাশ করেছেন, ২০২১ সালের শেষে ঢাকার মেট্রোরেল আংশিক চালু হবে। আর জাপানে নতুন প্রধানমন্ত্রী এলেও ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক জোরদার হবে।
এছাড়া চলতি অক্টোবর থেকে জাপান মহামারির কারণে অর্পিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে।
একান্ত সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান। করোনা পরিস্থিতির কারণে এই প্রকল্প কি বিলম্বিত হতে পারে বলে মনে করেন? যদি হয়, তবে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প শেষ করা কি সম্ভব হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, “করোনা মহামারির সময়ও মেট্রোরেলের কাজ চলছে। তবে গতি কিছুটা কমেছে এটা ঠিক। কাজের অগ্রগতির জন্য নির্মাণ শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক উদ্যোগ নিয়েছেন এবং কোভিডের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ”
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, “ডিএমটিসিএলের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, তাদের নেতৃত্বে সময়সীমার মধ্যে যেন কাজটি সম্পন্ন হয়। আমি আশাবাদী, ২০২১ সালের শেষে এমআরটি লাইন-৬ আংশিক চালু হবে। এছাড়া লাইন-১ এর বিস্তারিত নকশা তৈরির কাজ চলছে। আমরা গত আগস্টে পরামর্শ চুক্তি স্বাক্ষরের পরে নর্থ লাইনের কাজ শুরু করেছি। ”
তিনি জানান, ডিএমটিসিএল এখন মেট্রোরেল ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার কাজ শুরু করবে। বাণিজ্যিক পরিচালনা শুরুর জন্য শুধু নির্মাণের ক্ষেত্রে নয়, সুরক্ষা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সক্ষমতা জোরদার করা জরুরি।
ইতো নাওকি বলেন, “এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণের লক্ষ্যে জাপান সরকার ২০১২ সাল থেকে চার ধাপে ২৩৭.৫ বিলিয়ন ইয়েন অর্থায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এমআরটি লাইন-৬ এর বাণিজ্যিক অপারেশনের লক্ষ্যে নিরাপদে পরিচালনা ও প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখব। একইসঙ্গে আমরা বাংলাদেশ সরকার ও ডিএমটিসিএলকে রেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ- প্রশিক্ষণের জন্য অনুরোধ করতে চাই। ”
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেছেন। তার সময়ে ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক সবচেয়ে শক্তিশালী হয়েছিল। আবের পদত্যাগের পর ঢাকা-টোকিও সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে কি-না জানতে চাইলে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০১৪ সালে ঐতিহাসিক পারস্পরিক সফরের সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর থেকে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে বিস্তৃত ও অংশীদারিত্বের মধ্যে দিয়ে বিকাশ লাভ করেছে। ২০১৯ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরকালে উভয় নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও বিকাশের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে সম্বোধন করা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা স্মরণ করেছিলেন, সেই পারস্পরিক সফর ছিল দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অনেক বড় সুযোগ। আমি নিশ্চিত, জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের আগামী দিনে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। জাপানের নতুন নেতৃত্বেও সেই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। প্রকৃতপক্ষে জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদ সুগা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী চলবেন। সে কারণে অবশ্যই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করি। ”
মহামারি পরবর্তী সময়ে জাপান-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে আপনারা গুরুত্ব দেবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, “দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও বিকাশের জন্য উভয় দেশের দৃঢ়তা ও নিচ থেকে উচ্চ পর্যায়ের পারস্পরিক সফর বিনিময়ের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আমার প্রত্যাশা, জাপানের উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও জোরদার হবে। একই সাথে দুই দেশের জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগ, পারস্পরিক বিনিময় ও সমঝোতা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করবে। বাংলাদেশ থেকে আমরা আরও শিক্ষার্থী, প্রশিক্ষণার্থী ও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীদের জাপানে স্বাগত জানাই। অক্টোবর থেকে জাপান মহামারির কারণে দেওয়া ভিসা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে। নতুন শিক্ষার্থীদের জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসতে এবং পড়াশোনা করার অনুমতি দেবে। উভয় দিকে পর্যটনখাতেও সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হবে। ”
তিনি বলেন, “আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ও ২০২২ সালে জাপান-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকীতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব আরও উন্নত করার জন্য আমাদের সামনে দুর্দান্ত সুযোগ। আমি সে লক্ষ্যে ঢাকায় আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার অপেক্ষায় আছি। ”
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ে তুলতে চাই। একই সঙ্গে এই প্রসঙ্গে আমিও রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুটি স্পর্শ করার সুযোগটি নিতে চাই। এই ইস্যুর স্থায়ী সমাধান কেবল বাংলাদেশ নয়, এই অঞ্চল ও এই অঞ্চলের বাইরের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাপান শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানে সক্ষমতা ও প্রত্যাবাসনে সক্রিয় পরিবেশ তৈরি করতে বাংলাদেশের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। ”