বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের গঠিত যৌথ কোম্পানি ‘বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সুন্দরবনের পরিবেশ ক্ষতি করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে জাতীয় তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির। প্রকল্পের শুরুতে নানা আন্দোলন ও প্রতিবাদ করে জাতীয় কমিটি। সম্প্রতি ভারত থেকে আসা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দেওয়া প্রকৌশলী অনিমেশ জৈন আমাদের সময়কে বলেন, এ প্রকল্প পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না। পরিবেশ সুরক্ষার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রকল্পটিকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে। পরিববেশ সুরক্ষার জন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকায় প্রায় দেড় লাখ গাছ লাগানো হয়েছে। যার কারণে সেখানকার পরিবেশ স্বাভাবিক থাকবে। তাপমাত্রা থাকবে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে। এ ছাড়া প্রকল্পটিতে সব আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। যেসব প্রযুক্তির কারণে পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় পাঁচ মাস প্রকল্পের কাজের কিছুটা ক্ষতি হলেও ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা যাবে বলে তিনি জানান। রামপাল প্রকল্প নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিমেশ জৈনের সঙ্গে ইস্কাটন গার্ডেনের ইউনিক হাইটসে কোম্পানির অফিসে কথা হয় আমাদের সময়ের সঙ্গে। তিনি প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
অনিমেশ জৈন বলেন, কোভিড প্রকল্পটি পিছিয়ে দিলেও লক্ষ্য অনুযায়ী সেটি বাস্তবায়ন করতে জোর কাজ চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার কর্মী রামপাল প্রকল্পে কাজ করছে ‘মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্লান্টে। তিনি বলেন, প্রকল্পটির নাম ‘মৈত্রী থারমাল পাওয়ার প্লান্ট’। কারণ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটি বন্ধুত্বের। এ প্রকল্পটিও বন্ধুত্বের নিদর্শন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতে কৃষ্টিকালচার, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এক। দুটি দেশই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত। প্রতিবেশী দুটি দেশের রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটিও হবে পরিবেশবান্ধব এবং একটি সফল প্রকল্প।
প্রকৌশলী অনিমেশ জৈন বলেন, করোনায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার পর সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে আবার শুরু হয়েছে। এখন অতিরিক্ত লোকবল ও প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যেন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। তিনি যোগ করেন প্রকল্পে যারা কাজ করছেন, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রকল্পেই অনেকের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। প্রকল্পটিকে ঘিরে প্রকল্প এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নতি হবে। প্রকল্প এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের নানা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকার মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিআইএফপিসিএল নতুন কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। দুই দেশের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির একাধিক বৈঠকে সোলার প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের সিদ্ধান্ত হলে সোলার প্রকল্প ভারত বা বাংলাদেশ যে কোনো দেশেই হতে পারে।
রামপাল প্রকল্পের বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট কত হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে বিদ্যুতের দাম কত হতে পারে সেটি আগে থেকেই বলা মুশকিল। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুতের দাম নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম, সেই কয়লা পরিবহন খরচসহ আনুষঙ্গিক আরও অনেক বিষয়ের ওপর। অর্থাৎ প্রাইমারি জ্বালানি বা কাঁচামালের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তিনি যোগ করে বলেন, এখন সুখবর হচ্ছে- আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কম। কয়লার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওপরও নির্ভরশীল। কারণ তেলের দাম বাড়লে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। ফলে আমি মনে করি আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম, কয়লা কেনার চুক্তির ওপর অনেক কিছু নির্ভরশীল।
প্রসঙ্গত রামপাল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যৌথ কোম্পানি গঠন করা হয় ২০১২ সালে। ইপিসি কাজে দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং চুক্তি করা হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে।