নিউজ ডেস্ক:
রেলকে দেশের জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং দেশের প্রতিটি জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। ২০ বছর মেয়াদি এ মহাপরিকল্পনার চারটি পর্যায়ে প্রায় ২৩৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এতে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ সময়ের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। যুগান্তকারী এই পদক্ষেপ কার্যকর হলেই সারা দেশেই ট্রেনে যাতায়াত করা সম্ভব হবে। রেল জুড়বে ট্রান্স এশিয়ার রুটে।
মহাপরিকল্পনার আওতায় ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৬৪টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই ৬৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ১৪ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়। উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি ৭৬টি নতুন প্রকল্প ও ৬৫টি সংশোধিত প্রকল্পও অনুমোদন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এডিপি প্রকল্পের আওতায় ৪৩টি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ এখন শেষের পথে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, রেলওয়েতে আরো ৬০০টি ইঞ্জিন, ৬ হাজার যাত্রীবাহী কোচ ও ৭ হাজার মালবাহী ওয়াগন কেনা হবে। এ ছাড়া দূরত্ব অনুযায়ী, ইলেকট্রিক ট্রেন ও বুলেট ট্রেনসহ দ্রুতগামী ট্রেন চালু করা হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বুলেট ট্রেন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে।
রেল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলে ২৪৮ কিলোমিটার মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজ লাইনে রূপান্তর করা হয়েছে। ১ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ৯১টি নতুন রেলস্টেশন ভবন নির্মাণ এবং ১৭৭টি স্টেশন বিল্ডিং পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন রেল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ২৯৫টি এবং ৬৪৪টি পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৬টি লোকোমোটিভ, ২৭০টি যাত্রীবাহী কোচ, ৫৪৬টি মালবাহী ওয়াগন ও ২টি রিলিফ ক্রেন।
পুনর্বাসন করা হয়েছে ৪৩০টি যাত্রীবাহী কোচ ও ২৭৭টি মালবাহী ওয়াগন। চালু করা হয়েছে ১১৭টি নতুন ট্রেন। ৩৬টি ট্রেনের সার্ভিস ও রুট বর্ধিত করা হয়েছে।
মহাপরিকল্পনার আওতায় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা এবং যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। তারাকান্দী-বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) ৩৫ কিলোমিটার ও পাবনা-মাঝগ্রাম ২৫ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ প্রকল্পের আওতায় ১২৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ চলছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৬৫টি রেলওয়ে স্টেশন থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিকেট কাটা এবং ফিরতি টিকেট নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এবং কুমিল্লার লাকসাম হয়ে চট্টগ্রামে রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ৩১ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন। প্রতি অর্থবছরে রেল যোগাযোগের উন্নয়নে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৪টি ধাপে এই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমারা কাজ করে যাচ্ছি। পরে এ পরিকল্পনার সঙ্গে আরো বেশ কিছু প্রকল্পজুড়ে এটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৪৫ সাল করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।