আগামী ডিসেম্বরে মহাকাশে যাচ্ছে বাংলাদেশের ধনে বীজ। ভেষজ দ্রব্য বা ধনে বীজের মহাকাশ যাত্রা বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম। চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেস এক্সের ফ্যালকন-৯ দ্বিপর্যায়ের রকেটে চড়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন বা আইএসএসের উদ্দেশে রওনা হবে এই বীজ। এ ধনে বীজগুলো এখন নাসার সংরক্ষিত স্থানে অপেক্ষা করছে। স্থানীয় সময় বুধবার এক ই-মেইল বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-এমআইটির স্পেস সিস্টেম ল্যাবরেটরি ও কানেকশন সায়েন্সের প্রধান প্রকৌশলী মিজানুল চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুধু বাংলাদেশেরই ধনে বীজ মহাকাশে যাচ্ছে না। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, ইউনাইটেড আরব আমিরাতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ধনে বীজ পাঠানো হচ্ছে মহাকাশে। এই বীজগুলো আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন জাপানের কিবো মডিউলে সংরক্ষণ করা হবে ছয় মাস এবং তারপরে গবেষণা এবং শিক্ষার উদ্দেশ্যে আবার নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। গত ১৬ নভেম্বর সোমবার রাতে নাসার কমান্ডার মাইক হপকিনস, ভিক্টর গেøাভার, জাপানের সোচি নোগুচি এবং শ্যানন ওয়াকার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছেছেন। জাপানের নভোচারী সোচি নোগুচি এই বীজগুলোর ওপর
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আর এই ধনে বীজ সেখানে গবেষণায় ব্যবহার হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ থেকে এই ধনের বীজ গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় জাপান হয়ে স্পেস কার্গো বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছায়।
মিজানুল চৌধুরী বলেন, ২০২১ সালের জুন মাসে এই ধনের বীজগুলোকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে। তারপর জুলাই মাসে বাংলাদেশের বীজ পাঠানো হবে বাংলাদেশে। এরপর বাংলাদেশের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক, বিজ্ঞানীরা এই ধনের বীজের ওপর পরবর্তী পরীক্ষা করবেন। পরে পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনকে তারা জানাবেন।
মিজানুল চৌধুরী বলেন, আমি মনে করি এটি কেবল শুরু। আমাদের সদিচ্ছা এবং সহযোগিতা থাকলে এই ধনের বীজই এক দিন বাংলাদেশের জন্য মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের শিক্ষার্থী এবং তরুণ গবেষকদের জন্য মহাকাশ জীববিজ্ঞান সম্পর্কে শেখার একটি সুযোগ সরবরাহ করা। আর এই গবেষণা করা হচ্ছে মূলত চাঁদ এবং মঙ্গলের জন্য এবং তার সঙ্গে আমাদের পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের শিক্ষার্থী এবং তরুণ গবেষকরা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন এ জীববিজ্ঞানের ওপর গবেষণা করার সুযোগ তেমন পাচ্ছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের সুযোগ হয়েছে এই প্রথম। সম্প্রতি বাংলাদেশকে এই প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের দুটি প্রোগ্রামে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের রোবট প্রোগ্রামিং এবং আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন এ জীববিজ্ঞানের ওপর গবেষণা। আশা করছি এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী এবং তরুণ গবেষকরা ভবিষ্যতের জীববিজ্ঞান এবং মহাশূন্য গবেষণায় অনেক বড় অবদান রাখতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো এ দেশের কোটি কোটি মানুষ। বিশেষ করে তরুণরা। এদের আছে অনেক সাহস, শক্তি, এবং আবেগ। এর প্রমাণ পেয়েছি আমরা ১৯৭১-এ। আর এই সাহস, শক্তি, এবং আবেগের পাশাপাশি আছে তাদের অনেক মেধা। সুযোগের অভাবে এই মেধাগুলো বিকশিত হতে পারছে না। এখন সুযোগ আসছে, মানুষ হাতের মুঠোয় পুরো বিশ^কে ধরে রাখতে পারছে, এক সেকেন্ডে চলে যেতে পারছে পৃথিবীর অপর প্রান্তে জুমের মাধ্যমে, একটু চেষ্টা করলেই অনেক কিছু জানতে পারছে, ঘরে বসে অনেক কিছু করতে পারছে, বাংলাদেশে বসে নাসার সব খবর পাচ্ছে এবং তাদের কাজ দেখতে পারছে, ঘরে বসে দূর থেকে বড় বড় কোম্পানিতে কাজ করতে পারছে যে সুযোগ একসময় আমাদের ছিল না, আমাদের ছিল না আধুনিক সরঞ্জাম, আমাদের ছিল না ইন্টারনেট, আমাদের ছিল না নিজস্ব উপগ্রহ। এখন অনেক কিছু আছে এই তরুণদের সামনে। একসময় দেখা যাবে যে এই সুযোগটাও চলে যাবে অন্য একটি ভাইরাস বা অন্য কিছুর কারণে।
তিনি বলেন, আমার জন্ম বাংলাদেশে এবং আমি বড় হয়েছি সে দেশে। সেই মাতৃভ‚মির বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে বলছি, সুযোগ সবসময় থাকে না বা আসে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা এই তরুণ শিক্ষার্থীদের একান্ত দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আর এর সঙ্গে বাংলাদেশের অতি জরুরি কাজ হলো এই তরুণ মেধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো, তারা যেন অযথা জীবনের অতি প্রয়োজনীয় সময়গুলোকে অন্য কিছুতে নষ্ট না করে উন্নয়নশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারে সে ধরনের একটা পরিবেশ তৈরি করা। কারণ এসব তরুণ মেধা জজ একসঙ্গে করে উন্নয়নশীল কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ খুব সহজে এক দিন বিশে^র উন্নত দেশের তালিকায় চলে যেতে পারবে আমি মনে করি।