নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসকের আত্মীয় ব্যাংক কর্মকর্তার ব্যাগে বিপুল পরিমান সরকারী ঔষধ পাওয়া গেছে। আর ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুরে নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ আমিনুল ইসলামের চেম্বার থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ নিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাংক কর্মকর্তা জাহের উদ্দিনকে হাতে নাতে আটক করেন সদর উপজেলা পরিষদ চেযারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান। পরে তাকে হাসপাতাল কতৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
তবে এ ঘটনায় থানায় এখনো কোন অভিযোগ দেওয়া হয়নি। বুধবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ৫৮০ পিচ বিভিন্ন ধরনের সরকারি ঔষধ এবং ৪টি এলাজির্র মলম ব্যাগে করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। যদিও আবাসিক চিকিৎসক বলেন তিনি এতোগুলো ঔষধ দেননি শুধুমাত্র ৪টি মলম তার এই আত্মীয়কে দিয়েছেন। জব্দকৃত ঔষধের মধ্যে রয়েছে ইসোরাল ৬০পিস, সলবিয়ন-৪০পিস, ওপি ক্যাপসল ৮০পিস, কট্রিম ১৬০ পিস এমোক্স ৪০ পিস, প্যারাসিটামল ১০০ পিস, সিপ্রোসিন ২০ পিস, সিট্রিজিন ২০ পিস, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ৬০ পিস, এসিলোফিকাল২০ পিস এবং জেন্টামাইসিন ক্রিম ৪টি।
এতোগুলো ঔষধ একজন ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে পাওয়া গেলেও হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট বলেন এগুলো তিনি কাউকে দেন নাই। আর হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলছে তদন্ত করে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে সরকারী ঔষধ চিকিৎসকের আত্মীয়ের ব্যাগে পাওয়া গেছে শুনে হাসপাতালে সাধারন মানুষজন জড়ো হয়। তাদের দাবী এভাবেই সরকারী ঔষধগুলো চুরি করেন কতৃপক্ষ। আর ধরা পরলেই তদন্তের দোহায় দিয়ে সব শেষ করে দেন। নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, তিনি দুপুরে জরুরী কাজে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আমিনুল ইসলামের চেম্বারে যান। এ সময় চিকিৎসকরে চেম্বার ভিতর থেকে বন্ধ করা ছিল। পরে তার পরিচয় পেয়ে ভিতর থেকে দরজা খুলে দেওয়া হয়। চেম্বারে উপস্থিত আরএমও’র আত্মীয় ব্যাংক কর্মকর্তা জাহের উদ্দিন তার ব্যাগে বেশ কিছু ঔষধ তুলে রাখছিলেন। পরে এগুলো কিসের ঔষধ জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন না। পরে আরএমও’র কাছেও জানতে চাওয়া হলে তিনিও কিছিু বলতে পারেন না। এরপর তিনি সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান ,হাসপাতালের সহকারি পরিচালক আনসারুল হক সহ বিভিন্ন চিকিৎসক ও পুলিশকে ঘটনাটি জানান।
খবর পেয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঔষধগুলো জব্দ ও ব্যাংক কর্মকর্তা জাহের উদ্দিনকে আটক করেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রোগীর আত্মীয় স্বজনেরা বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, সাধারণ মানুষ এবং অনেক গরিব মানুষ ওষুধের জন্য চিকিৎসা করাতে পারছেনা আর ইনারা স্বজনপ্রীতি করে আমাদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে। এ ঘটনাটি জানতে চাওয়া হলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, তার এক আত্মীয়ের হাত কেটে যাওয়ায় বিশেষ প্রয়োজনে মাত্র ৪টি ক্রিম তিনি দিয়েছেন। এছাড়া জাহের উদ্দিনের ব্যাগে বাঁকী ঔষধগুলো কিভাবে গেলো সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এ ব্যাপারে জাহের উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি ঔষধের বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হয়নি। নাটোর হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট রেবেকা সুলতানার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কিভাবে তার কাছে সরকারী ঔষধ গেলো তা তিনি জানেন না। আর তিনি কাউকে কোন ঔষধ দেন নাই।
এ বিষয়ে নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আনসারুল ইসলাম জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে থেকে জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর সেখানে থাকা সরকারী ঔষধগুলো জব্দ করা হয়। জব্দকৃত ঔষধগুলোর মধ্যে দু’তিন প্রকারের ঔষধ বর্তমানে হাসপাতালে স্টকে নেই। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এই ঔষধগুলো চিকিৎসার নামে হাসপাতালের কোন ব্যক্তি জমা করে রেখেছিলেন। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে আর তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
নাটোরের সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান জানান, জব্দকৃত দু’তিন প্রকারের ঔষধ বর্তমানে হাসপাতালে স্টকে নেই। তবুও ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। কিভাবে সরকারী ঔষধগুলো তার ব্যাগে গেলো। তদন্তের পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত জানান তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন এবং তাদের সকলের কথা শুনেছেন। এখনো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।