নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মাত্র আধা কিলোমিটার পাকা রাস্তার অভাবে হাজারো মানুষের দূর্ভোগ চরমে পৌছে গেছে। স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মিষ্টি কথার আশ্বাসেই থেকে গেছে এই দূর্ভোগ। চেয়ারম্যান মেম্বার বদল হলেও বদল হয়নি ঔই গ্রামের মানুষের ভাগ্য। প্রতিদিন শত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার কি কষ্ট তা চোখে না দেখলে বুঝার উপায় নাই। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষি নির্ভর। এখানকার উৎপাদিত ফসল নিয়েও তাদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়। মসজিদে নামাজ আদায় করতে যেতেও নোংড়া হয়ে যেতে হয়। এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে। বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামীলীগের ঘাটি বলে চিহ্নিত এলাকাটির কোন উন্নয়ন করেনি তারা। এভাবে অবহেলিত হয়েই পার করেছেন কত বছর। এরপর স্বাধীনতার স্বপেক্ষের সরকার আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আশায় বুক বাধে গ্রামের মানুষ। এবার হয়তো তাদের দূর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু সেখানেও কোন উন্নয়ন হয়নি বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে। এলাকার সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও এলাকার মেম্বার এখন আওয়ামীলীগের নেতারা। তবুও তাদের দিয়ে কোন উপকার পাচ্ছেন না গ্রামবাসী। গ্রামবাসী এখন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। গ্রামবাসীর দাবী মাত্র আধা কিলোমিটার কাচা রাস্তা পাকা করে দিয়ে তাদের এই দূর্ভোগ লাঘব করবেন সরকার।
এলাকার এই বৃদ্ধ আফসার আলী খলিফা বলেন, তাদের এই রাস্তাটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিরা রাস্তা নির্মানের আশ্বাস দিলেও কাজ হয় না। রাস্তাটি জরুরি ভিত্তিতে পাকা হওয়া দরকার।
মোহাম্মদ বায়তুল্লাহ, মোহাম্মদ সোহেল রানা, ও মোহাম্মদ পলাশ খান সহ আরো অনেকেই বলেন, জালালপুর গ্রাম অত্যন্ত অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ গ্রামের রাস্তা-ঘাট উন্নয়নে কোন ছোঁয়া লাগেনি। জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েও কিছুই রক্ষা করেনি। জামনগর-তমালতলা পাকা রাস্তা সংলগ্ন এ গ্রামটির যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ রাস্তার ফুলতলা মোড় থেকে জালালপুর গ্রামের দূরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার। এই গ্রামে ৩টি জামে মসজিদ রয়েছে। এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজ আদায় করেন সেই মসজিদে। কিন্তু চলাচলের অযোগ্য এই রাস্তা দিয়ে গিয়ে নামাজ আদায় করতে তাদের চরম সমস্যায় পড়তে হয়। অযু করে মসজিদে যাওয়ার পর নতুন করে অযু করতে হয় তাদের। গ্রামের এই কাচা সড়কটি খানা-খন্দকে ভরা। বিভিন্ন সময় গ্রামবাসি স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রাস্তাটি মেরামত করে আসছে। গ্রীষ্মে ধূলো-বালি ও বর্ষায় হাঁটু কাদায় মানুষের চরম দূর্ভোগ সৃষ্টি করে। এ গ্রামের লোকজন ধূলো-বালি ও কাদা মাড়িয়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতে অত্যন্ত কষ্টের শিকার হয়। কৃষকরা কৃষি পণ্য পরিবহনে চরম কষ্ট পায়। যে কোন নির্বাচন আসলেই প্রার্থীরা মুখে উন্নয়নের ফুলঝুরি ছড়ায়। সেই মিথ্যা আশ্বাসে প্রলুব্ধ হয়ে ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত করেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পরেই জনপ্রতিনিধিরা ভুলে যান তাদের প্রতিশ্রুতি।
বাঁশবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র আব্দুল বারী ,বাঁশবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ তুফান, বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ জাকারিয়া ও নাহিদ হাসান সহ আরো অনেকেই বলেন, এই গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। ধূলো-বালি ও কাদা মাড়িয়ে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে হয়। সামান্য একটু সড়কের জন্য তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাদের এই দূর্ভোগের কথা তারাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছেন একাধীকবার কিন্তু কোন উপকারে আসেনি। তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাস্তাটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম এই সড়কটি পাকা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরে নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় সেই সময় রাস্তাটি আর পাকাকরণ করা হয়নি। এরপর দূর্ভোগ লাঘবে বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলকে রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য জানানো হয়েছে। তিনিও আশ্বাস দিয়েছেন সড়কটি পাকা করে দেওয়ার।