শফিকুল ইসলাম। পেশায় তিনি শিক্ষক। তিনি নাটোরের গুরুদাসপুরের নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বানিজ্য বিভাগের শিক্ষক। পেশায় শিক্ষক হলেও নেশা তার বিয়ে করা। এক এক করে মোট ৪টি বিবাহ করেন। এরই মধ্যে তৃতীয় বিবাহটি করেন গত বছরের শেষের দিকে নাজিরপুর মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেনীতে পড়ুয়া ফাতেমা নামের এক কিশোরীকে। ফাতেমার বয়স কম হওয়ায় সেই সময় বিয়েটি রেজিষ্ট্রি হয়না। কিন্তু কাজী সহ সকলের উপস্থিতিতে ধর্মীয় ভাবেই তাদের বিবাহ হয়। এরপর ৭ দিন ওই কিশোরীকে নিয়ে ঘর সংসার করেন শফিকুল ইসলাম। পরে কৌশলে ফাতেমাকে তার মায়ের বাড়ীতে রেখে চলে যায় সে। এরপর থেকে কৌশলে ফাতেমার থেকে দুরে সড়ে যেতে থাকে শফিকুল। আস্তে আস্তে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে থাকে শফিকুল। কয়েকমাস হলো ফাতেমাকে ঘরে তুলে নিচ্ছেন না তিনি। বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করলে শফিকুল বলেন তিনি ফাতেমাকে বিয়েই করেন নাই।
অবশেষে নিরপায় হয়ে শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে আসামী করে ধর্ষন মামলা করেন ফাতেমা। আর মামলা দায়েরর পরই পুলিশ শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। এদিকে শফিকুলের ৪ স্ত্রীর মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে তালাক হয়েছে অনেক আগেই। প্রথম স্ত্রী বর্তমানে সিংড়ায় তার বাবার বাড়ীতে থাকেন। অন্য স্ত্রী তার আপন চাচাতো বোনের মেয়েকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে পরে সে গ্রেফতার হয়ে হাজতবাসও করেন। এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে ফিরে এসে বিষয়টি মিমাংসা করে নিয়ে তাকেও তালাক দেন শফিকুল। এছাড়াও শফিকুলে বিরুদ্ধে রয়েছে শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন সহ প্রাইভেট পড়ানোর নামে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগও রয়েছে।
বাল্য বিবাহের শিকার ভুক্তভোগী কিশোরী ফাতেমা অভিযোগ করে জানান, তার মায়ের সাথে সৎ বাবার সাথে থেকে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে আসছিল সে। শিক্ষক শফিকুলের বাড়ী ও তাদের বাড়ী একই গ্রামে। তাদের বাড়ী নাজিরপুরের নতুন পাড়া মহল্লায় আর শফিকুলের বাড়ী নাজিরপুর বাজারে। সে মাদ্রাসায় পড়া অবস্থায় শফিকুল তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাকে বিয়ে করে। বিয়ের সময় বিয়েতে অসম্মতি থাকলেও অসহায় পরিবারের কথা চিন্তা করে রাজি হয়েছিল সে। এপর তাকে নিয়ে শফিকুলের বাড়ীতেই উঠে সে। বিয়ের ৭দিন পর তাকে মায়ের বাড়ীতে বেড়াতে নিয়ে এসে তাকে রেখে চলে যায় শফিকুল। এরপর আর সে আসেনি। এখন আর কোন যোগাযোগ করেনা।
এ ঘটনায় শফিকুলকে আসামী করে ফাতেমা গুরুদাসপুর থানায় ধর্ষন মামলা দায়ের করে। ফাতেমার মা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরেই শফিকুল তার মেয়েকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। শফিকুলের আগের দুই স্ত্রীর কথা তিনি জানতেন। বিয়ের আগে শফিকুল বলেছিলেন তার স্ত্রীর সাথে তালাক হয়ে গেছে। এখন তার কোন স্ত্রী নাই। সব জেনেই মেয়ের জিবনের কথা চিন্তা করে বাল্য বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের কয়েকদিন পরে মেয়েকে তার কাছে বেড়াতে নিয়ে এসে রেখে চলে যায় শফিকুল। এরপর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই জানিয়ে দেন শফিকুল তার মেয়েকে বিয়েই করেননি। এখন লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেন না তারা। এ দিকে এ বিষয়ে শফিকুল ইসলাম ফাতেমাকে বিয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, ধর্মীয় নিয়মনীতি ও আইন মেনে তিনি একাধিক বিবাহ করতে পারেন। তিনি কাকে বিয়ে করবেন আর না করবেন এটা তার ব্যাপার। অন্যকারো সমস্যা হবে কেন। শফিকুল ও ফাতেমার বিয়ে পড়ানো কাজী মোহম্মদ আলী বিয়ে পড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, শফিকুলের চাপে পড়ে তিনি ফাতেমার সাথে বিয়ে পড়ান। কিন্তু বয়স না হওয়ায় বিয়েটি রেজিট্রেশন হয়নি।
এলাকাবাসী জানান, শফিকুলের বিরুদ্ধে শুধু একাধিক বিয়ে করার অভিযোগই নয়। তার বিরুদ্ধে প্রাইভেট পড়ানোর নামে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগও রয়েছে। ২০১৪ সালে আপন চাচাতো বোনের মেয়েকে বিয়ে করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এঘটনায় তিনি হাজতবাস করেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেন। তদন্তে শফিকুল দোষী হলেও বিদ্যালয় থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শফিকুলের ধারাবাহিক এমন যৌন লালসার ফলে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবু ঘটনার সতত্যা নিশ্চিত বলেন, কিছু দিন পর পরই শিক্ষক শফিকুলের বিরুদ্ধে নারী ঘটিত অভিযোগ পাওয়া যায়। এর আগেও তার কোন এক আত্মীয়ের মেয়েকে বিয়ে করে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু কোন ভাবেই সে ওই পথ থেকে ফিরে আসেনা।
শফিকুলের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাছাড়া কখনও কোন অভিভাবক এধরনের কোন অভিযোগ দেয় নাই। শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগি কিশোরী ফাতেমা থানায় একটি ধর্ষনের মামলা দায়ের করেছে। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ শফিকুলকে গ্রেফতার করে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।