ডেস্ক নিউজ
আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নেবে
থাকবে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী স্মারক সৌধ ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ইতিহাস তুলে ধরা হবে
মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীর পূর্বাচলে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বঙ্গবন্ধু চত্বর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে একসঙ্গে নির্মাণ করা হবে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী স্মারক সৌধ। চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বা ২০২১ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করা হবে। স্থাপত্য অধিদফতর একটি খসড়া নক্সা প্রণয়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে এই নকশা চূড়ান্ত হবে।
প্রাথমিকভাবে বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণে পূর্বাচলের তিনটি স্থান নির্বাচন করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক। এর মধ্যে যে কোন একটি স্থান চত্বর নির্মাণের জন্য বেছে নেয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর তিন সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী স্মারক সৌধ স্থাপনের কাজ বাস্তবায়নের জন্য গণপূর্ত অধিদফতর এবং রাজউকের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১১ সদস্যবিশিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে দেশের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।
সূত্র জানায়, পূর্বাচলে বিশেষভাবে তৈরি চত্বরটিতে থাকবে সুন্দর ও মনোরম পানির ফোয়ারা। থাকবে দৃষ্টিনন্দন আলোর ব্যবস্থা। রাতের আঁধারে রং বেরংয়ের আলোর বিচ্ছুরণ অনেক দূর থেকে দেখা যাবে। স্মারক সৌধের সামনে থাকবে বসার ব্যবস্থা। পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এ স্থানে এসে সময় কাটাতে পারবেন সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ। নাগরিকদের রাতে আড্ডা দেয়ার জন্য থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধুর স্মারক সৌধে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শুরু করে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ইতিহাস তুলে ধরা হবে। এতে ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথান, ১৯৭০ এর নির্বাচন ও ১৯৭২ সালের ৭ মার্চের ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা তুলে ধরা হবে। স্মারক সৌধে বঙ্গবন্ধুর এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম শীর্ষক ভাষণের বঙ্গবন্ধুর হাতের আঙ্গুল প্রদর্শিত থাকবে। তিনটি নির্বাচিত স্থানের মধ্যে একটি হচ্ছে ১৫ নং সেক্টরে। এর তিন পাশেই রয়েছে লেক তথা পানি। এই স্থানটি নির্বাচনের সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এ চত্বরটি নির্মাণের জন্য ৫ নং সেক্টরের ১০৩নং সড়কটি পছন্দ করেছেন। এটি কাঞ্চন ব্রিজসংলগ্ন। যুক্তি হিসেবে তিনি দাবি করেন, দেশের মোট ২২টি জেলার সম্মিলন স্থল হচ্ছে এই এলাকা। এ স্থান দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার বাস ট্রাকসহ নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করে। এ স্থানে নির্মাণ করা হলে চত্বরটির সৌন্দর্য দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে ও আসল উদ্দেশ্য পূরণ করা সম্ভব হবে। এর আগে সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমও সরেজমিনে পরিদর্শন করে একই স্থানে বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণের পক্ষে মত দেন। পরবর্তীতে বর্তমান গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের পর পুনরায় স্থান পরিদর্শন করেন। পরে সার্বিক দিক ও সৌর্ন্দয্যময় স্থান হিসেবে পূর্বাচলের মধ্যবর্তী এলাকায় এ চত্বরটি নির্মাণের পক্ষে রায় দেন। একইসঙ্গে স্থাপত্য নক্সা চূড়ান্ত করার জন্য স্থাপত্য অধিদফতরকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণের নির্ধারিত স্থান কাঞ্চন ব্রিজ সংলগ্ন সড়ক চত্বরের অধিকাংশ জমি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাভুক্ত ঢাকা-কালীগঞ্জ বাইপাস রোডে পড়েছে। ফলে জমি অধিগ্রহণসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। তাই বিকল্প স্থান হিসেবে ১৫ নং সেক্টরের ২০৩ নং সড়কের ১৭ নং প্লটকেই বেছে নেয়া হয়। একইসঙ্গে ল্যান্ড ইউজ প্লানে প্রদর্শিত পার্ক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নতুন এ স্থানটির জমির পরিমাণ ২ দশমিক ৩১৯ একর।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে পূর্বাচলের মোট তিনটি স্থান নির্বাচন করা হলেও সার্বিক বিবেচনায় ও দৃশ্যমান অবস্থান দেখে এ স্থানটিকে প্রথম পছন্দ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। একইসঙ্গে এ এলাকায় নাগরিকগণ সহজেই প্রবেশ ও বের হতে পারবেন। তাই লেকের পাশেই গুরুত্বপূর্ণ এ স্থাপনাটিকে নির্বাচিত করা হয়েছে। জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারি গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর সভাপতিত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী স্মারক সৌধ স্থাপনের উদ্দেশ্যে আলোচনা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।
সভায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী স্মারক সৌধ স্থাপনের কাজ বাস্তবায়নের জন্য গণপূর্ত অধিদফতর এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ১১ সদস্যবিশিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। একইসঙ্গে এ কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রধান প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদফতর, প্রধান প্রকৌশলী, রাজউক ও প্রধান স্থপতি, স্থাপত্য অধিদফতরের সমন্বয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। এ সময় স্থাপত্য অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থপতি সভায় নির্মিতব্য স্মারকের প্রাথমিক নক্সা উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে ২ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত স্থাপত্য নক্সা দাখিল করা হয়। পরে ৪ ফেব্রুয়ারি কাঠামোগত নক্সা প্রণয়ন করা হয়।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচল বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণের লক্ষে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর উপদেষ্টা কমিটি ও বাস্তবায়ন কমিটির একটি যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণের উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের জন্য প্রকল্পের নক্সা বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিস্তারিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই প্রকল্পের সম্ভাব্য তিনটি স্থান প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়। একইসঙ্গে নির্বাচিত সাইটটির বিস্তারিত তথ্যসহ একটি সাইট নক্সা সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েও পাঠায়। এছাড়া এই সাইটে নক্সা প্রণয়নের জন্য রাজউক এর অটো ক্যাড নক্সার সফট কপি স্থাপত্য অধিদফতরে প্রেরণ করে। এরপর গণপূর্ত বিভাগের নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক ৬ ফেব্রুয়ারি বিস্তারিত প্রাক্কলন এবং বিওকিউ দাখিল করেন। পরে তা উপদেষ্টা কমিটি ও বাস্তবায়ন কমিটির যৌথসভায় উপস্থাপিত হলে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী স্মারক সৌধ নক্সাটির স্থাপত্য নক্সা, অবকাঠামো নক্সা ও প্রাক্কলন চূড়ান্ত করা হয়। সভায় স্মারক সৌধ স্থাপনের কাজ ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ও কাজটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সূত্র জানায়, করোনার প্রকোপের কারণে এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর দাবির কারণে স্থান নির্বাচন এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি রাজউক। তাই চত্বর নির্মাণের কাজ অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে। তবে অতি দ্রুত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেয়া হলে মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর নির্ধারিত সময়ে চত্বর বা স্মারক সৌধ নির্মাণ করা সম্ভব হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পরিচালক উজ্জল মল্লিক জনকণ্ঠকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আমরা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বঙ্গবন্ধু চত্বর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এতে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিশাল আকৃতির স্মারক সৌধ নির্মাণ করা হবে। তবে কোন স্থানে এ চত্বরটি নির্মাণ করা হবে তার স্থান এখনও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় চূড়ান্ত করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বা ২০২১ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে এটির উদ্বোধন করা হতে পারে।
উজ্জল মল্লিক বলেন, প্রাথমিকভাবে এ চত্বর নির্মাণে পূর্বাচল এলাকায় মোট তিনটি স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে যে কোন একটি স্থানই চত্বর নির্মাণের জন্য বেছে নেয়া হবে বলে জানা গেছে।