ডেস্ক নিউজ
প্রকৃতির প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে পুরোদমে এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম নদীর তলদেশের সড়ক কর্ণফুলী টানেলের কাজের গতি। নদীর তলদেশে দ্বিতীয় টিউব বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে পুরোদমে। আশা করা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে দ্বিতীয় টিউব বসানোর কাজ শুরু হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা কাজের এ গতি অব্যাহত রাখতে পারলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে বহুল প্রত্যাশিত টানেলটি। কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতির মধ্যেই সীমিত পরিসরে কাজ চলমান ছিল। গত কয়েক মাসে প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হলেও এখন চেষ্টা করা হচ্ছে দ্রুতগতিতে কাজ করার। এরই মধ্যে সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার।’
জানা যায়, করোনা প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিতে নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও সীমিত পরিসরে অব্যাহত ছিল কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ কাজ। এরই মধ্যে গত ৮ আগস্ট শেষ হয়েছে নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে একটি টিউব তৈরির কাজ। ৩৫ ফুট প্রস্থ এবং ১৬ ফুট উচ্চতার টিউবটি পতেঙ্গার নেভাল একাডেমির পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে আনোয়ারা উপজেলার কাফকো ও সিইউএফএল পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় টিউবের মুখ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে দ্রুতগতিতে। আশা করা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় টিউব তৈরির কাজ শুরু হবে। দ্বিতীয় টিউবটি আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা অভিমুখী হবে। টানেলের সেগমেন্ট নির্মাণের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। এরই মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ সেগমেন্ট নির্মাণ শেষ হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার সেগমেন্ট টানেলে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। টিউব ও সেগমেন্টের পাশাপাশি কর্ণফুলীর পশ্চিম ও পূর্বপ্রান্তের মোট ৫ কিলোমিটারের বেশি সংযোগ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার সেতু ও ওভারপাস তৈরির কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। এরই মধ্যেই সংযোগ সড়ক, সেতু ও ওভারপাস তৈরির কাজের অগ্রগতি হয়েছে অনেকাংশ। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, টানেলের প্রতিকূল সমস্যা ও প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়েছে। এ বিশেষজ্ঞ দল টানেলের প্রতিটি পদক্ষেপ বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা তৈরি করছে। প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই কাজের গতি ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী বিভক্ত করেছে নগর ও আনোয়ারা উপজেলাকে। নদীর এক পাশে নগরী, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমান বন্দর অপর পাশে আনোয়ারা উপজেলায় রয়েছে ভারী শিল্প এলাকা। সরকার বিভক্ত চট্টগ্রামের দুই অংশকে সংযুক্ত করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ সরকার ও চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পের যৌথ অর্থায়ন করছে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এ টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি পুরোদমে চালু হলে প্রতি বছর প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্পকারখানা ও পর্যটনশিল্পে।