ডেস্ক নিউজ
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত এক সভায় বক্তারা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনও পাকিস্তানের নেতা বা মন্ত্রী হতে চাননি। তিনি রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণের বিরোধিতা করেছেন। বাঙালির স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছেন। ছাত্রলীগ গঠন, ৬ দফা, ১১ দফাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা ফুটে উঠেছে। শুধু মাটি আর মানুষ নিয়ে স্বাধীনতার তিন বছর ৭ মাসের মধ্যে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলেছিলেন। এ কারণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে তাকে জীবন দিতে হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুধু একজন মহান নেতাকে হত্যা করা হয়নি, পুরো বাঙালি জাতিকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রকারীদের সে স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা হতে যাচ্ছে। তবে ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিকেলে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ এতে মূল আলোচক ছিলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এম এ কাশেম, মীর নাসির হোসেন, এ. কে. আজাদ, কাজী আকরাম উদ্দিন, আবদুল মাতলুব আহমাদ, সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বক্তব্য দেন। সূচনা বক্তব্য দেন সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শুধু রাজনৈতিক মুক্তি নয়, অর্থনৈতিক মুক্তিও চেয়েছেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই পাকিস্তানের শোষণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি চেয়েছেন এ দেশের মানুষ উদ্যোক্তা হবে। এজন্য তিনি দেশ স্বাধীনের পর দ্রুত বিসিক গঠন করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বিশ্বাস করতেন না। এজন্য তিনি সর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হননি।
সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো সৎ রাজনৈতিক নেতা পৃথিবীতে বিরল। তিনি সব সময় দেশ ও মানুষের কথা ভাবতেন। আইয়ুব খান তাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি গ্রহণ করেননি। ১৯৪৭ থেকে ধীরে ধীরে বাংলার মানুষকে একত্র করেছেন। দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জিয়াউর রহমান পুরস্কার হিসেবে বিদেশে চাকরি দিয়েছেন। খালেদা জিয়া সংসদে বসিয়েছেন। এরপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা তারাই করেছে। ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট একই সূত্রে গাঁথা। একটা গোষ্ঠী চেয়েছে বাংলাদেশ হবে অনুন্নত দেশের মডেল। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মডেল হয়েছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রসারিত চিন্তা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরে বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না। বিনিময়ের (বার্টার) মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি হতো। তখনই তিনি রপ্তানি বহুমুখীকরণের চিন্তা করতেন। নিরাপদ দেয়াশলাই, বৈদ্যুতিক তার, মধু কভাবে রপ্তানি করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকল পাটকল জাতীয়করণ করলেও পরিচালনায় আগের মালিক ও কর্মীদের রেখেছিলেন। পরে বাংলাদেশিদের মালিকানার পাটকল বেসরকারি খাতে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আশির দশকেই বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে চলে যেত।
এম এ কাশেম বলেন, বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাঙালি জাতির মুক্তি চেয়েছেন। বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশ সেদিকেই যাচ্ছে। মীর নাসির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর কারণে আজকের বাংলাদেশ। কিছু মানুষ বাংলাদেশকে পেছনে ঠেলতে চেয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার শক্তিশালী নেতৃত্বের কারণে তা পারেনি।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ার আগ্রহ, পরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চাইলে বিলেতে গিয়ে আইনে পড়তে পারতেন। কিন্তু তিনি রাজনীতি করার জন্য লন্ডনে পড়তে যাননি। মানুষের জন্য তিনি ছাত্রজীবন থেকেই নিবেদিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মানুষের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। এর ফল দেশবাসী পাচ্ছে।
কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু কখনও মৃত্যুকে ভয় পাননি। তিনি মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকতেন। ১৯৪৮ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য নয়। আজকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু ও টানেল বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ সবই বঙ্গবন্ধু চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন তার কন্যার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
সংসদ সদস্য সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মানচিত্র, পতাকা, জাতীয় সংগীত, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার দিয়েছেন। ‘৭৫ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ শতাংশ। আজকের প্রধানমন্ত্রীও দেশকে একইভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন। তবে শঙ্কাও আছে। আত্মকলহ, অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের উপকৃত করার প্রতিযোগিতা ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। ত্যাগী নেতাদের দলে সম্মান দিতে হবে। ষড়যন্ত্র আগেও ছিল, এখনও আছে।
এফবিসিসিআইর সহসভাপতি রেজাউল করিম রেজনুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সংগঠনটির বর্তমান পর্ষদের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন জেলা চেম্বার ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।