অনগ্রিড এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজ শেষ, অফগ্রিডের ১০৫৯টি গ্রামে ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ পৌঁছাবে
শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। চলতি বছরের শেষে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) দেশের সব গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেবে। অর্থাৎ বছর শেষে আলোকিত হবে বাংলাদেশের সব গ্রাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিআরইবির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এরই মধ্যে সংস্থাটি দেশের উপজেলাগুলোয় অনগ্রিড এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজ শেষ করেছে। আর অফগ্রিড এলাকার অবশিষ্ট এক হাজার ৫৯টি গ্রামে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ তিন ধাপে বিকল্প পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। বিআরইবি দেশের ৪৬১টি উপজেলায় বিদ্যুতায়নের কাজ করছে। এখন বিআরইবির বিদ্যুতের সুবিধাপ্রাপ্ত মোট জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি।
জানা গেছে, অফগ্রিড এলাকাগুলোয় ছয় মাস আগে শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তিন ধাপে এ কাজ সম্পন্ন করা হবে। প্রথম ধাপে সাড়ে ৬০০ গ্রামে সংযোগ প্রদানের কাজ চলতি মাসেই শেষ হওয়ার কথা। এর বাইরে ২৯টি গ্রাম বাদে সাড়ে ৩০০ গ্রামে আগামী অক্টোবরের মধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। আর অফগ্রিড এলাকার অবশিষ্ট ২৯টি গ্রামে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বিআরইবি।
এ প্রসঙ্গে বিআরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈনউদ্দিন (অব.) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আশা করছি ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আরইবির ভৌগলিক এলাকায় শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারব। এরই মধ্যে আমরা অনগ্রিড এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজ শেষ করেছি। আর অফগ্রিড এলাকার গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে আরইবি ৩২৮ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে; যা এক্সক্লুসিভ একটি প্রকল্প। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে এখনো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি চ্যালেঞ্জের। আগে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ পেতাম না। এখন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪ ঘণ্টা হয়তো গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পান না। আগামী পাঁচ বছরে এ অবস্থার আরও উন্নতি হবে বলে আশা করছি। তবে বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্য বিআরইবি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই অফগ্রিড এলাকার গ্রামগুলোয় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে।
বিআরইবি চেয়ারম্যান জানান, আলোর ফেরিওয়ালা প্রকল্পের মাধ্যমে আরইবি মাসে মাসে প্রায় তিন লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। গত আগস্টে বিআরইবির ভৌগলিক এলাকার গ্রিডের মাধ্যমে পাঁচ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে গ্রাহকের কথা শোনার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ উঠান বৈঠক করা হয়েছে। সে বৈঠকে গ্রাহকের সমস্যার কথা শোনা হয়েছে এবং তাদের দুর্ভোগ দূর করার জন্য ‘অন দ্য স্পট’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনকি করোনাকালেও সেবা প্রদানের জন্য ‘আলোর গেরিলা’ নামে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানা যায়, অফগ্রিড এলাকায় বিআরইবির মোট এক হাজার ৫৯টি গ্রাম আছে। এখানে মোট আড়াই লাখ গ্রাহক আছে। এ বছরের শেষ নাগাদ তিনটি ধাপে এ আড়াই লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। বিআরইবির প্রকল্পের বাইরে সরকারেরও আলাদা একটি প্রকল্প আছে। অফগ্রিড এলাকার ১০৫৯টি গ্রামের মধ্যে ১০৩০টি গ্রাম গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত হবে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে। আর বাকি ২৯টি গ্রাম যার বেশির ভাগই দুর্গম পাহাড়ি, উপকূলীয় এলাকা ও চরাঞ্চল, সেখনে সৌর বিদ্যুতের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে। সোলার প্যানেলের ব্যবস্থা করা হবে।
মেজর জেনারেল মঈনউদ্দিন (অব.) জানান, বর্তমানে বিআরইবির আওতায় পাঁচ লাখ কিমি. বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন আর এক হাজার ৭০টি সাবস্টেশন আছে। বৈদ্যুতিক তারগুলো গ্রামের উপকূলীয় এলাকা, ঘন গাছাপালার নিচ দিয়ে গেছে। আর ইচ্ছে করলেও নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ দিতে গ্রামের এত ফলদ ও বনজ বৃক্ষ হুটহাট কেটে ফেলা সম্ভব নয়। তবে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রদানে আরইবি কর্তৃপক্ষ শহরভিত্তিক বৈদ্যুতিক তারগুলো মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেছে। একই সঙ্গে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের অংশ হিসেবে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার, স্মার্ট গ্রিড করা, অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে।
বিআরইবি চেয়ারম্যান বলেন, ২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত গত এক দশকে বিআরইবির গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৬ লাখ। আগে সিস্টেম লস ছিল ১৮ শতাংশ আর এখন সিস্টেম লস কমে সিঙ্গেল ডিজিট হয়েছে।