ইংরেজি বর্ণ কিউ মানে ‘কোয়ালিটি’, কিউ মানে ‘কোয়ানটিটি’, আবার কিউ মানে ‘কুইক’। এই ‘থ্রি-কিউ’ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মুজিববর্ষে এগিয়ে চলেছে সরকারের নির্মাণ কাজের পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তর। দ্রুততম সময়ে এখন নিশ্চিত হচ্ছে কাজের গুণগত মান এবং পরিধি। আলোচিত জি কে শামীমসহ ঠিকাদারদের বিভিন্ন সিন্ডিকেটও ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
জানা গেছে, উল্লিখিত ‘থ্রি-কিউ’ মন্ত্রের প্রর্বতক গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম। প্রায় আট মাস আগে এই পদে যোগদানের পরপরই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং কাজকর্মে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি গতিশীলতা আনতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ড ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে চালু করেন ‘থ্রি-কিউ’ মন্ত্র। এ লক্ষ্যে গঠিত পাঁচটি কমিটির মাধ্যমে কাজের গুণগতমান শতভাগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রকল্প প্রণয়ন থেকে শুরু করে তা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতারও অবসান ঘটেছে। মিলেছে সুফল।
সরকারের অ্যালোকেশন অব রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির মধ্যে রয়েছে প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক ও আবাসিক অবকাঠামোসমূহ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ এবং এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে গণপূর্তের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে অবিচল রয়েছেন। এ জন্য করোনা মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতের চলমান উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও মাঠ প্রশাসনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী হাসপাতালগুলোতে পিসিআর ল্যাব, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার, আইসোলেশন সেন্টারসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ জন্য বিভাগ ও জেলা পর্যায় থেকে গণপূতর্ অধিদপ্তরকে চিঠি পাঠিয়ে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে গণপূর্ত অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রকৌশলী আশরাফুল আলম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা আট শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ শতাংশে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নয়টি প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজার ১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে সংশ্নিষ্ট সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একইসঙ্গে আরও নয়টি প্রকল্পের অধীনে আট হাজার ৮৩৫টি ফ্ল্যাটের কাজ অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনুমোদনের পর দ্রুততম সময়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসনের হার আট শতাংশ থেকে প্রায় ২২ শতাংশে উন্নীত করা হবে। অবশিষ্ট ফ্ল্যাটের চাহিদা পরবর্তী ২০৪১ সালের মধ্যে সমাপ্ত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদেশে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ, ৬৪টি জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নির্মাণ, জেলা রেজিস্ট্রি ও সাব- রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ, দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিভাগের ৫০টি হাইওয়ে আউটপোস্ট নির্মাণ, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিভাগের জন্য নয়টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ, ৪৬টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, ৫০০ ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ১০০ উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণ, টাঙ্গাইলে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সম্প্রসারণ, গোপালগঞ্জে শেখ লুৎফর রহমান ডেন্টাল কলেজ স্থাপন, গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, তথ্য কমিশন ভবন নির্মাণ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবন নির্মাণ, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়), জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপেল্গক্স, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যালয়ে দুটি বেইজমেন্টসহ ২০ তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয় নির্মাণ, দেশের ৩৭ জেলায় সার্কিট হাউসের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প, বিপিএটিসির প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ঢাকাস্থ রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, ঢাকার অফিসার্স ক্লাব ক্যাম্পাসে বহুতল ভবন নির্মাণ, সচিবালয়ে ২০ তলা বিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণ অন্যতম। এসব প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সংশ্নিষ্ট প্রকল্পের একাধিক পরিচালক নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত দুর্নীতির বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের সব দরপত্র প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করার পাশাপাশি শতভাগ ইজিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী আফশরাফুল আলম। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৭টি কাজের চুক্তি বাতিল করে সেগুলোর পুনঃদরপত্র আহ্বান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ওই চক্রটি আশরাফুল আলমকে নিয়ে নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। অথচ প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের মাত্র আট মাসের মধ্যেই তিনি অধিদপ্তরকে দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটমুক্ত করে ঐতিহ্যের ধারায় ফিরিয়ে এনেছেন বলে জানান তারা।