নিউজ ডেস্ক:
বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর জাপান বিগত ১৮শ শতকের শেষ ভাগে জ্ঞান-বিজ্ঞানে তখন পর্যন্ত অনগ্রসর ছিল। কিন্তু তদানিন্তন সম্রাট মেইজি জাপানের পুনর্গঠনে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি দ্রুতই বুঝতে পারেন, জাপানে উপযুক্ত শিক্ষকেরই অভাব রয়েছে। তাই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করে তুলতে তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষিত কয়েক হাজার শিক্ষককে জাপানে নিয়ে আসেন। তার এমন দূরদর্শী নীতির কারণেই আজকের জাপান জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সারাবিশ্বের মধ্যে এক রোল মডেলের পরিণত হয়।বাংলাদেশেও শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে জাপান সম্রাট মেইজি’র বিদেশি শিক্ষক নীতি অনুসরণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বর্তমান সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতার সময় অর্থমন্ত্রী অসুস্থ বোধ করায় তার পক্ষ থেকে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলছেন, “জাপান সম্রাটের পথ অনুসরণ করার সময় আমাদের এসে গেছে এবং প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়ে আসতে এই বাজেটেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে”। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীর ঘাটতি নেই, ঘাটতি দেখা দিয়েছে উপযুক্ত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের। প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে শিক্ষার সর্বস্তরে উপযুক্ত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের কাছে আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে হস্তান্তর করতে চাই। আর সেই উপযুক্ত শিক্ষক বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণের জন্য সরকার এই বছর থেকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
বর্তমান বিশ্বে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রযুক্তিভিত্তিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের শ্রেণীকক্ষে ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, রোবোটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ব্লকচেইন টেকনোলজির মতো সময়োপযোগী সব বিষয় শেখাতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। এর জন্য বর্তমান বাজেটে শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে পাঁচ বছর মেয়াদে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এর আওতায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শিক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এবারই প্রথম এমপিওভুক্তির কার্যক্রমের জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান রাখা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। এছাড়া, সার্বিকভাবে শিক্ষা খাতের বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে ২০ হাজার ৫২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও নতুন বাজেটে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
এবারের বাজেট যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে সময়োপযোগী এক ‘শিক্ষার’ বাজেট।বাংলাদেশের শিক্ষা বাজেটের গতি প্রকৃতি লক্ষ্য করলেই তা সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে একের পর এক নেওয়া হচ্ছে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো জোরদার কল্পে এখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।