ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূরের বিরুদ্ধে এবার অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন এক তরুণী।
সোমবার রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় নূরসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি সময়নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে নূর ও ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং ধর্ষণে সহযোগিতা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করেন ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী।
নূর ও মামুন ছাড়াও মামলায় অপর আসামিরা হলেন- ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, ঢাবির ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি নাজমুল হুদা ও ঢাবি শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হিল বাকি।
মামলার এজাহারে বাদী নিজেকে প্রধান আসামি মামুনের বান্ধবী পরিচয় দিয়েছেন। তার অভিযোগ, হাসান আল মামুন তার একই বিভাগের সিনিয়র ছাত্র এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয়। তারা মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন চালিয়ে যান। একপর্যায়ে তার সঙ্গে মামুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে মামুন তাকে লালবাগের বাসায় ডেকে নেয়। তিনি বাসায় গেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মামুন তাকে ধর্ষণ করেন।
সাবেক ভিপি নূরসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে বাদী এজাহারে বলেছেন, ঘটনার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ১২ জানুয়ারি তাকে মামুন তার বন্ধু (২ নম্বর আসামি) সোহাগের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তখন তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সোহাগ বাধা দেস। একপর্যায়ে তিনি যাতে হাসপাতালে থাকতে না পারেন, সে জন্য নানা অপচেষ্টা চালান। এর মধ্যে তিনি এক নম্বর আসামি মামুনকে বিয়ের চাপ দিলে সে বিয়ে করতে সম্মত হলেও পরে টালবাহানা শুরু করে।
বাদী বলেন, কোনো উপায় না দেখে গত ২০ জুন বিষয়টি নুরুল হক নূরকে (৩ নম্বর আসামি) মৌখিকভাবে জানালে তিনি বিষয়টির সুরাহা করর আশ্বাস দেন। নূর তাকে নীলক্ষেতে দেখা করতে বলেন। সেখানে গেলে মীমাংসার কথা এড়িয়ে তাকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেন। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে নূর তার ভক্তদের দিয়ে উল্টাপাল্টা পোস্ট দেওয়াবেন বলেও হুমকি দেন। তাকে (বাদীকে) পতিতা বলে ছাত্র অধিকার পরিষদের লাখ লাখ মেম্বারের গ্রুপে প্রচার চালানোরও হুমকি দেন। তার একটি লাইভে সব সম্মান চলে যাবে বলেও তাকে শাসান। মামলার ৪ নম্বর আসামি সাইফুল তার (বাদী) নামে কুৎসা রটাতে ৫ নম্বর আসামি নাজমুল ও ৬ নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ হিল বাকিকে দায়িত্ব দেয়। তারা মেসেঞ্জার গ্রুপে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকে।
মামলার এজাহারে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে অভিযোগকারী ছাত্রী বলেন, পুরো ঘটনাটি ছাত্র অধিকার পরিষদের অনেকেই জানেন। অনেকেই মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বললেও তাকে ঘোরানো হচ্ছিল। মামুনও তাকে বিয়ের আশ্বাসে ঘুরাচ্ছিল। এ জন্যই তিনি বাধ্য হয়ে দেরিতে হলেও আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।
মামলার পর সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতেই রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে ভিপি নূরসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধর্ষণের মামলার পাশাপাশি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগেও তাকে আটক করা হয়। এরপর নূরকে নেয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। ডিবি অফিসে নেয়ার পর ভিপি নূরের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসা শেষে রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ছেড়ে দেয়ার কিছুক্ষণ পরই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নূর।
এ সময় তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কেন ছেড়ে দেয়া হয়েছে তা বুঝতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নূর বলেন, আমাকে মুচলেকা নিয়ে তারা (ডিবি) ছেড়ে দিয়েছে। সেখানে (ডিবি কার্যালয়ে) আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা হয়েছে।
নুরুল হক নূর বলেন, আমাকে কেন গ্রেফতার করা হলো? কেন ছাড়া হলো? আর কেনই বা আক্রমণ করা হলো? কিছুই বুঝলাম না। আমরা এ রকম বিভিন্ন সময় হামলা-মামলার শিকার হই। একজনে মারে, আরেক জনে গ্রেফতার করে, আরেক জনে ছাড়ে। এভাবেই চলতেছে। এদেশে বিচার নাই। এই দেশে শাসন নাই। আমার বিচার হচ্ছে জনগণের কাছে।
নূর আরও বলেন, আমরা ছাত্র নেতা, আমরা তো অপরাধী না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শেষ করে আসছিলাম। কোনো রকম উস্কানি ছাড়া পুলিশ আমাদের ওপর এভাবে আক্রমণ করল। কয়েকজনের অবস্থা খুবই খারাপ। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের বেশ কয়েকজনকে চিকিৎসা নেয়া লাগবে।