ভারতের রাজ্যগুলো চাইলে আগামী ১৫ অক্টোবরের পর থেকে ধাপে ধাপে খোলা যাবে স্কুল ও কলেজ। আনলক-৫ বা রি-ওপেনিং-এর নতুন নির্দেশিকা জারি করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, কনটেনমেন্ট এলাকার বাইরে বেশ কিছু গতিবিধিতে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কনটেনমেন্ট জ়োনে অবশ্য ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত লকডাউন থাকছে।
ভারতে প্রতিদিন সংক্রমণ এখন আশি হাজারের ঘরে। কিন্তু উৎসবের মাসে দেশের আর্থিক গতিবিধিতে গতি আনতে সিনেমা হল ও মাল্টিপ্লেক্সেগুলোও ১৫ অক্টোবর থেকে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে প্রতিটি শো-তে প্রেক্ষাগৃহে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি দর্শক থাকতে পারবেন না। প্রশিক্ষণের জন্য খুলে যাচ্ছে সুইমিং পুলগুলোও।
তার জন্য নির্দিষ্ট নিয়মাবলি ১৫ অক্টোবরের আগে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ঘোষণা করবে বলে জানানো হয়েছে। ১৫ অক্টোবরের পর খোলা যাবে বিনোদন পার্কগুলোও। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে সেগুলো কীভাবে চলবে, তার নির্দেশিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। পশ্চিমবঙ্গের মতো কিছু রাজ্য, যারা সংক্রমণ রুখতে সপ্তাহের মাঝে হঠাৎ করে এক দিন লকডাউন ঘোষণা করছিল, তাদের সেই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধ করা হয়েছে।
কেন্দ্র জানিয়েছে, কনটেনমেন্ট জ়োনের বাইরে লকডাউন করা যাবে না। আর যদি তা করতেই হয়, সে ক্ষেত্রে আগে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, কিছু রাজ্য হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করায় খাদ্য পণ্য থেকে শুরু করে ওষুধ-অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। তাই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, রাজ্যগুলোতে এই ধরনের লকডাউনে দেশের আর্থিক গতিবিধি ধাক্কা খাচ্ছে।
এ বারের নির্দেশিকার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, স্কুল-কলেজ খোলায় সবুজ সঙ্কেত। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কনটেনমেন্ট জ়োনের বাইরে ১৫ অক্টোবরের পর থেকে স্কুল-কলেজ পর্যায়ক্রমে খোলা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকছে রাজ্যের হাতেই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেরো সমীক্ষা জানিয়েছে, ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই সংক্রমিত হচ্ছে।
ফলে স্কুল খুললে শিশু-কিশোরদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ভাবে রয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সেই কারণে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, এই সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে কোনও পড়ুয়াকে স্কুলে উপস্থিত থাকতে বলতে পারবেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়ার স্কুলে যাওয়া বা না-যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাবা-মায়ের অনুমতির উপরে নির্ভর করবে।
সংক্রমণ এড়াতে স্কুলের জন্য নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধিও রাজ্যগুলিকে প্রস্তুত করতে হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। সেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য থাকবে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা গবেষণা কেন্দ্রগুলো, বিশেষ করে বিজ্ঞানের মতো বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন যাঁরা, তাঁরা তা আগের মতোই চালিয়ে যেতে পারবেন।
অক্টোবরে দুর্গাপুজো-দশেরা। তারপর দীপাবলি, ছটের মতো উৎসব। এ সব উৎসবের কথা ভেবে একশ’ জনের বেশি জমায়েতে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র। সামাজিক, ক্রীড়া, বিনোদন, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশও ছাড় পেয়েছে এ যাত্রায়। কেন্দ্র জানিয়েছে, বদ্ধ এলাকা বা কোনও হলে মোট ক্ষমতার সর্বাধিক পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ জমা হতে পারবেন। তবে উপস্থিতির সংখ্যা কখনই দুশ’র বেশি হবে না।
মাঠ বা খোলা জায়গায় জমায়েত হতে পারবে। তবে সব ক্ষেত্রেই করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। খোলা জায়গায় কত লোক ভিড় করতে পারেন, তার কোনও সংখ্যা অবশ্য নির্দেশিকায় জানানো হয়নি। তবে এ ধরনের জমায়েত বা ভিড় থেকে করোনা সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সে জন্য রাজ্যগুলিকে আলাদা ভাবে নিয়ম জারি করতে বলা হয়েছে।