সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় অর্জুন লস্করের পর দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে সাইফুর রহমান ও রবিউল ইসলাম।
শুক্রবার সিলেটের অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে সাইফুর রহমান এবং সিলেট মহানগর হাকিম-২ সাইফুর রহমানের আদালতে রবিউল ইসলাম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এরআগে সন্ধ্যায় অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে অর্জুন লস্করও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমুল্য কুমার চৌধুরী জানান, শুক্রবার বিকাল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আদালতে তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-১ এর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালতে দীর্ঘ শুনানির পর প্রথমে অর্জুন ও পরে সাইফুর রহমান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে ১ম আদালতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় আসামি রবিউল ইসলামকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর বিচারক সাইফুর রহমানের আদালতে হাজির করা হলে একইভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রবিউল ইসলাম। স্বীকারোক্তির পর তাদের তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদেরকে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-১ জিয়াদুর রহমানের আদালতে হাজির করে শাহপরাণ থানার পুলিশ। এরপর তিন আসামির মধ্যে অর্জুন প্রথমে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর জবানবন্দি দেন সাইফুর ও রবিউল।গত সোমবার তাদের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ আদালত। এছাড়া মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আরও ৫ আসামির ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আগামীকাল শনিবার (৩ অক্টোবর) মামলায় গ্রেপ্তারকৃত অপর তিন আসামি রাজন, আইনুল ও মুহিবুর রহমান রনিকে রিমান্ড শেষে আদালতে তোলার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট এমসি কলেজের হোস্টেলে এক তরুণীকে গণধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। অভিযুক্ত কর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার ওই তরুণী তার স্বামীকে নিয়ে সিলেটের এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। ঘোরাঘুর একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে তরুণীর স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য এমসি কলেজের গেটের বাইরে বের হন। এসময় কয়েকজন যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চান। এতে তরুণীর স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করতে শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। একপর্যায়ে তরুণী ও তার স্বামীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমসি কলেজের হোস্টেলে নিয়ে যান। সেখানে স্বামীকে বেঁধে ছাত্রলীগের তিন-চারজন নেতাকর্মী তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এসময় তাদের সাথে থাকা ৯০ টি মডেলের একটি কারও ছিনিয়ে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে কারটি তাদের জিম্মায় নেয় এবং তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি-তে প্রেরণ করে।
তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে এসএমপির শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। নির্যাতিত ওই তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। এরপর গত রোববার দুপুরে সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতের হাকিম শারমিন খানম নিলার কাছে সেই রাতের ঘটনার জবানবন্দি দেন নির্যাতনের শিকার তরুণী।