নিউজ ডেস্ক:
যানজটের শহর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আর এই যানজটেই প্রতিদিন নষ্ট হয় কয়েক লক্ষাধিক কর্মঘণ্টা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে এই সড়কেই। আর ঢাকার এই যানজট কমাতে সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারসহ নতুন নতুন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে তারা। তবে ঢাকার গত দশ বছরের যানজটের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নতুন নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে যানজট বহু অংশে কমে এসেছে। এদিকে ঢাকার যানজটকে আরও কমাতে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে সরকার। দ্রুত যাতায়াতের উদ্দেশ্যে পাতাল রেল নির্মাণের চিন্তা ভাবনা হাতে নিচ্ছে সরকার।
এর অংশ হিসেবে ঘনবসতির শহর ঢাকায় দুই বছর ধরে হয়েছে পাতাল রেল (সাবওয়ে) নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই। এর মাধ্যমে প্রথম পাতাল রেলের রুট ও নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) প্রস্তাবনা অনুযায়ী, রুট ‘এমআরটি লাইন-১’ হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত।
মূল নকশা প্রণয়নের কাজও শেষ প্রান্তে জানিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এমআরটি লাইন-১’ এর মূল ডিপিপিও (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) চূড়ান্ত করা হয়েছে। সে অনুসারে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এ রুট। থাকছে দু’টি অংশ। প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত। ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ অংশটি হবে দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল বা পাতাল রেল। অন্য অংশ পূর্বাচল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রুটটি হবে এলিভেটেড অর্থাৎ মাটির উপর দিয়ে উড়াল রুট।
দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে জনসাধারণের ভোগান্তির অভিজ্ঞতা থাকলেও এই পাতাল রেল নির্মাণে কোনো ভোগান্তি হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, পাতাল রেলের সমস্ত কাজ মাটির নিচ দিয়ে হবে। রুটের ওপরের অংশে নিয়মিতভাবে যানবাহন চলাচল করবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ঢাকা শহরের তলদেশ ও ভূমির বৈশিষ্ট্য পাতাল রেল (আন্ডারগ্রাউন্ড সাবওয়ে) নির্মাণের উপযোগী, যা জাপানের ওসাকা শহরের মতো। এ কারণে ওসাকা শহরের মতোই রাজধানীর মাটির ২০ থেকে ২৫ মিটার গভীরে পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। আর পাতাল রেল নির্মাণে টানেল খননে অত্যাধুনিক টানেল বোরিং মেশিন ব্যবহৃত হয় বিধায় কাজের সময় জনদুর্ভোগ হবে না। পরিবেশ বিপর্যয়ও হবে না বলা চলে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার কোটি টাকা, যা চলমান পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পের চেয়েও ব্যয়বহুল। অবশ্য প্রকল্পের একাংশের কাজের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
পাতাল রেল প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, বিমানবন্দর ও কমলাপুর রুটে দেশের প্রথম পাতাল রেল হবে। আমরা ডিপিপি চূড়ান্ত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। আমাদের দিক থেকে কোনো কাজ বাকি নেই। পাতাল রেল নির্মাণে কোনো ভোগান্তি হবে না। কারণ সমস্ত কাজ মাটির নিচ দিয়ে যাবে। প্রকল্পে জাপান সরকার আমাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই ঋণ চুক্তিসহ হয়ে গেছে। নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলের মতো এটাও তরুণ প্রজন্মের কাছে একটা স্বপ্নের প্রকল্প।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের ভায়াডাক্ট, টানেল, এলিভেটেড অ্যান্ড আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন পূর্তকাজের জন্য সার্বিক নকশা চূড়ান্ত। ডিপোর জন্য ভূমি অধিগ্রহণ নকশা ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেমের জন্য মৌলিক নকশাও করা হয়েছে। স্বপ্নের এ প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকার যানজট নিরসন ও গণপরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এই পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে হচ্ছে ‘এমআরটি লাইন-১’ এর আওতায় হচ্ছে প্রথম পাতাল রেল।