ডেস্ক নিউজ
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহি কমিটি (একনেক) জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর-১ম সংশোধিত প্রকল্পসহ ৪টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
অনুমোদিত চারটি প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৫৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৭৪০ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস হতে অনুদান ৯১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।
একনেক-এর চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।
মায়ানমার থেকে কক্সবাজারে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা এবং কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের জন্য ‘জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর-১ম সংশোধিত’ প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ৯৩০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
অনুমোদিত চারটি প্রকল্প হলো : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন-১ম সংশোধিত’ প্রকল্প; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকার পোল্ডার নং-৬২-পতেঙ্গা, পোল্ডার নং-৬৩/১এ -আনোয়ারা, পোল্ডার নং-৬৩/১বি -আনোয়ারা এবং পটিয়া পুনর্বাসন-২য় সংশোধিত’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গাসংকট মোকাবেলায় মাল্টি-সেক্টর-১ম সংশোধিত’ প্রকল্প এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘হাতে কলমে কারিগরি প্রশিক্ষণে মহিলাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে বিটাকের কার্যক্রম সম্প্রসারণপূর্বক আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্যবিমোচন-ফেজ-২’ প্রকল্প।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সভায় অংশগ্রহণ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, অনুমোদিত চারটি প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৭৪০ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস হতে অনুদান ৯১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই) যৌথভাবে কক্সবাজারের আট উপজেলা- উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, রামু, চকোরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া এবং পেকুয়ায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করা, সামাজিক সেবা প্রদানের পদ্ধতি উন্নতর করা, নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করা, আগুনের ঘটনা থেকে ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করা, শিক্ষার জন্য আরও উন্নত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং এইভাবে এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যবস্থা জোরদার করে মায়ানমার থেকে কক্সবাজারে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য দূর করা।
মো. জাকির হোসেন জানান, যদিও বিশ্বব্যাংক এবং কেএফডব্লিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে অনুদান দিতে আগ্রহী ছিল না, তবে পরে তারা রাজি হয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের দ্বারা পরিবেশের বিভিন্ন দূষণ, পানির উৎসের ক্ষতি, ফসলের জমি এবং বনের ক্ষতির কারণে অনুদান হিসাবে ৯১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মূল প্রকল্পের কার্যক্রমে ৫০ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, ২২২.৯৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ৩৭১ মিটার সেতু নির্মাণ এবং ৪৬৭.৫০ মিটার কালভার্ট নির্মাণ, ৩৪ টি বহুমুখী কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, ৪২.১৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ৯০ টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন নির্মাণ, প্রকল্পের এলাকায় ২ হাজার ৫০০ পানির অপশন নির্মাণ করা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন যে, মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আসার কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ বা আশ্রয়দানকারী মানুষের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে, যা সঠিকভাবে সমাধান করা দরকার।