শাস্তির আওতা বাড়ছে জাল নোট প্রতিরোধ আইনে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা নোট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জাল নোট দিলে জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছিদ্র করা নোট বাজারে ছাড়লে বা লেনদেন করলে সাজা ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে জাল নোট প্রতিরোধে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাল নোট বহন, প্রচলন ও বিস্তারের সাথে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতে দেশে বর্তমানে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। ফৌজধারি দণ্ডবিধি ১৮৬০ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর আওতায় বর্তমানে জাল নোটের মামলা ও বিচারকার্য সম্পন্ন হয়। জাল নোটসহ যাদের ধরা হয় তাদের অনেকেই সাধারণ মানুষ। আইনি ঝামেলায় পড়ে হয়রানি হতে হয়। এ ছাড়া সাক্ষীর অভাবে বিচারকার্যও বিলম্বিত হয়। এসব কারণে নতুন আইন করা হচ্ছে।
নতুন আইনের খসড়ায় একটি জাতীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ডেপুটি গভর্নরের সভাপতিত্বে এ কমিটির সভাপতি হবেন। সদস্য হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব, আইন বিভাগের একজন প্রতিনিধি, পুলিশ, বর্ডার গার্ড, দুইজন ব্যাংকের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিভাগের জিএম এর সদস্যসচিব হবেন।
কমিটি জাল মুদ্রা ও প্রতিরোধবিষয়ক নীতি নির্ধারণ করবে। জাল মুদ্রা প্রস্তুত, ধারণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, সরবরাহ, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। জনগণ যাতে ব্যাংকিং লেনদেনের বাইরে ব্যক্তিগত লেনদেনের অর্থ ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে ব্যাংকিং সময়সূচির মধ্যে পরীক্ষা করে নিতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী পরিচালকের সভাপতিত্বে একটি জাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেল গঠিত হবে। এতে থাকবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব, পুলিশ, সিআইডি, র্যাব, বিজিডি, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা এর সদস্য সচিব হবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিভাগ জাল মুদ্রার বাহক, সরবরাহকারী, প্রস্তুতকারী, বিপণনকারী, মুদ্রা প্রস্তুতে ব্যবহƒত ও আনুষঙ্গিক একটি তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে জাল মুদ্রা তৈরিতে ব্যবহƒত কাগজ, রাসায়নিক দ্রব্যাদি, যন্ত্রপাতিসহ যেকোনো উপকরণ সংরক্ষণ ক্রয়-বিক্রয় বা আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে।
নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক হতে অনুমোদিত প্রিন্ট বা মিন্ট করে বাতিল করা বিকৃত মুদ্রা বাজারজাত করলে বা লেনদেনে ব্যবহার করলেও শাস্তিযোগ্য অপরাপধ বলে গণ্য হবে।
বাংলাদেশী নতুন বা পুরাতন যেকোনো মুদ্রায় মুনাফা অর্জন, প্রতারণা বা অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয় করলে শাস্তি পেতে হবে সংশ্লিষ্টকে। কোন ব্যক্তি সরল বিশ্বাসে নিজের অজান্তে জাল মুদ্রা বহন করলে বা লেনদেন করলে এবং এটি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা যাবে না বা মামলাও করা যাবে না। কোনো ব্যক্তির কাছে অনধিক ১০ পিস জাল নোট পাওয়া গেলে বিকল্প পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করা যাবে। এই আইনের দায়ের করা মামলা আমলযোগ্য, অজামিনযোগ্য এবং অ-আপসযোগ্য বলে গণ্য হবে।
কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মুদ্রা সরবরাহকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জাল মুদ্রা সরবরাহ করলে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক জরিমানা করা যাবে। জরিমানার পরিমাণ বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। এই আইনের আওতায় জাতীয় কমিটিকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারা সময় সময় জরুরি প্রয়োজনে বিধি প্রণয়ন ও তা কার্যকর করতে পারবেন।