জাতিসঙ্ঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক পদক্ষেপগুলো আরো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে চলমান ৭৫তম সাধারণ পরিষদের প্রথম কমিটির (নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক) সাধারণ বিতর্কে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে গতকাল এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা। গতকাল জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বানকে পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা খাতে পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমানবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের সুবিধাকেই কাজে লাগিয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ‘আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা’র সর্বোচ্চ মান মেনে চলা এবং পারমাণবিকসহ পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণে বাংলাদেশের সূদৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই নীতি-আদর্শ উৎসাহিত হয়েছে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে। যে ভাষণে ‘বিশ্বে উত্তেজনা হ্রাস করা, অস্ত্র প্রতিযোগিতা সীমিত করা এবং পৃথিবীর প্রত্যেকটি স্থানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি জোরদার করার’Ñ বিষয়ে সবাইকে সমবেত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
রাবাব ফাতিমা বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি, রাসায়নিক অস্ত্র বিষয়ক সমঝোতা, জীবাণু অস্ত্রবিষয়ক সমঝোতা, রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা, ব্যাপকভিত্তিক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি, অস্ত্র-বাণিজ্য চুক্তিসহ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সব প্রধান নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক চুক্তি ও পদক্ষেপের সাথে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এসব চুক্তি ও পদক্ষেপ রক্ষার ও অনুমোদনের জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
রাষ্ট্রীয় ও অখণ্ডরাষ্ট্রীয় পক্ষের দ্বারা হিংসাত্মক কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করে তিনি বলেন, এর ফলে উন্নত এই ডিজিটাল পৃথিবীর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিপন্ন হচ্ছে। তিনি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানান।
যোগাযোগ ও গবেষণার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু সাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, মহাকাশে এখন বাংলাদেশ আরো বেশি অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রবেশ করেছে। তিনি মহাকাশকে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, টেকসই, উন্মুক্ত, প্রবেশযোগ্য ও অস্ত্রমুক্ত রাখার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, জাতিসঙ্ঘের নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক পদক্ষেপগুলো আরো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করবে।
কোভিড-১৯ জনিত কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে সদস্য দেশগুলোর সর্বনিম্ন উপস্থিতির মাধ্যমে স্বল্পপরিসরে এবারের সাধারণ পরিষদের কমিটিগুলোর সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।