পঞ্চম দফায় পদ্মাসেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২০২২ সালে সেতুর কাজ শেষ হলে সর্বোচ্চ নয়শো থেকে এক হাজার কোটি টাকা বাড়বে। সেক্ষেত্রে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে একত্রিশ হাজার একশো তিরানব্বই কোটি টাকা। পাইলিং জটিলতা, বন্যা ও করোনার কারণে সময় বেড়েছে প্রায় তিন বছর, খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ।
৩২ তম স্প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান হয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। তবে, এর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে চারমাস। আগে প্রতি মাসে যেখানে এক থেকে দুটি স্প্যান বসানো হতো সেখানে জুনের পর থেকে দীর্ঘ বিরতি। এর মূল কারণ করোনা ও বন্যা।
২০১৫ সালে পাইল ড্রাইভের কাজ শুরুর পর ২২টি পিলার পাইলিংয়ে তৈরি হয় জটিলতা। নদীর তলদেশের মাটির গঠনের কারণে বসানো যাচ্ছিলো না পিলার। এই পিলারগুলোর নকশা জটিলতার সমাধান পেতে সময় লাগে দেড় বছর। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সব পিলারের নকশা জটিলতার সমাধান আসে, যদিও লক্ষ্য ছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেসেতু চালু হওয়ার। এরপর ২০২০ সালে আবারও থমকে যায় কাজের গতি, করোনা ও বন্যার কারণে।
যে কোন প্রকল্পে দেখা যায়, সময় বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায় বরাদ্দ। পদ্মা সেতুতেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ২০০৭ সালে একনেক ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যায়। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিক প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারো ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বাড়ে। ২০১৮ সালে বাড়তি যুক্ত হয় আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এভাবে চার দফা বাড়ানোয় প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
এবিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সময় বাড়লে ব্যয় বাড়ে। তবে, আমি আশাবাদী আন্তঃখাত সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা এটা করতে পারবো। আরো এক বছর সময় বেড়ে গেলে অর্থ ব্যয়ও বেড়ে যাবে। হয়তো আটশো থেকে নয়শো কোটি টাকা বাড়তে পারে, যদিও ২০২২ সালে চলে যায়। কোন কারণে যেতে পারে, আনসারটেইন। সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকা। এর বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই, যদি ২২ এর জুনে চলে যায়। ডিসেম্বরের মধ্যে করতে পারলে এখন যেটা আছে সেটাতেই হবে।’
এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা সেতু বিভাগের। রোডওয়ে স্ল্যাব ও রেল স্ল্যাব বসানোর কাজে গতি আনতে আরো বিদেশি পরামর্শক খোঁজা হচ্ছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৯০ ভাগ, নদী শাসন ৭৪.৫ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১.৫ ভাগ।