জাপান সরকার এবং ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডাবুএফপি) যৌথভাবে বাংলাদেশি কৃষক এবং মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দেবে। গতকাল বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি ও ডাবুএফপি বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর আলফা উমারু বাহ এই সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।
জাপানের অবদান ডাবুএফপি’র কৃষকদের বাজার পরিচালনায় সাহায্য করবে। এর আওতায় কক্সবাজারের স্থানীয় ২ হাজার ৪০০ কৃষক স্থানীয়ভাবে চাষকৃত তাজা সবজি বাজারে সরবরাহ করতে পারবেন, যেখান থেকে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া ২০ হাজার শরণার্থী সেই সবজি সংগ্রহ করতে পারবেন। ডাবুএফপি কৃষকদের বাজারের মডেল নিশ্চিত করে স্থানীয় কৃষকদের এবং ব্যবসায়ীদের তাদের পণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করার জন্য স্থানীয়করণকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহের চেইন বজায় রাখা স্থানীয় অর্থনীতিতে যোগান ধরে রাখতে সহযোগিতা করবে। এ বিষয়ে ডাবুএফপি বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর আলফা উমারু বাহ বলেন, ‘কৃষকদের বাজারের মডেলটি উদ্বাস্তুদের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিপুল অর্থনৈতিক সুযোগ এনে দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এই বাজারও উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক, স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনকারীদের আয় বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি উদ্বাস্তুদের জন্যও খাদ্য সহজলভ্য হবে।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘আমি ডাবুএফপিকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার জেতার জন্য আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই। তারা খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে বিশ্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এই প্রকল্পে, স্থানীয় কৃষক এবং বাস্তুচ্যুত, উভয়ই সুবিধা পাবেন। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি যে এই প্রকল্পটি কক্সবাজারে ‘রোহিঙ্গা’ শরণার্থী এবং স্থানীয়দের সহায়তা করতে সক্ষম হবে ও বাংলাদেশের স্থিতিশীল উন্নয়নে অবদান রাখবে।’
ডাবুএফপি›র সরকারী বাজারের মাধ্যমে শরণার্থীরা সহায়তা কার্ড ব্যবহার করে সরাসরি স্থানীয়দের কাছ থেকে তাজা খাবার সংগ্রহ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে একটি প্রতীকী অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হবে। এটি দুটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সামাজিক সংহতিতে অবদান রাখবে। এটি বাংলাদেশে ডাবুএফপি’র দায়িত্ব পালনে জাপানের জোরালো সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়টিও তুলে ধরে। ২০১৭ সালে কাজ শুরু করার পর থেকেই ডাবুএফপি বাংলাদেশকে ১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়ে সহায়তা করেছিল জাপান। ২০১৯ সালে তারা আরও ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়ে সহায়তা করে। ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশে প্রচুর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনের পর থেকে জাপান সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এনজিওগুলিকে প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা করেছে। কক্সবাজারে, ডাবুএফপি প্রতি মাসে ৮ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা ও ৫ লাখেরও বেশি দুস্থ বাংলাদেশীকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।