চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেকে কীভাবে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা যায়, সে চিন্তা মাথায় রেখে যুবকদের দেশ গঠনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। আসছে শীতে করোনা প্রতিরোধে দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালু করার পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইন জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সরকারের কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুব সম্প্রদায়কে সবধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বা দুর্নীতি এসবের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান খুবই কঠোর থাকবে। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। চলমান মহামারি করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, করোনার প্রভাব সব দেশে আবারও ব্যাপকভাবে দেখা দিচ্ছে। ইউরোপের অনেক দেশ লকডাউন দিচ্ছে। তাই আমাদের সবাইকেও এখন সুরক্ষিত থাকতে হবে। আমাদেরও এখন সজাগ থাকতে হবে। সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকবেন তেমনটা নয়। কিন্তু যখন কারও সঙ্গে মিশবেন এবং জনসমাগম বা মার্কেটে যাবেন, তখন মাস্ক পরে অবশ্যই নিজেকে সুরক্ষিত করবেন।
তিনি বলেন, এখন থেকে যারাই দেশের বাইরে থেকে আসবে তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। তাদের সবার করোনা টেস্ট করাতে হবে। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সব স্থলবন্দরে কেউ প্রবেশ করতে গেলেই চেক করতে হবে করোনাভাইরাস নিয়ে কেউ দেশে ঢুকছে কি না।
অনুষ্ঠানে যুব সমাজের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা ডিগ্রি নিয়েই চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কীভাবে কিছু করা যায় ‘নিজে কাজ করব, আরও দশজনকে চাকরি দেব, নিজে উদ্যোক্তা হব, নিজেই বস হব।’ এ কথাটা মাথায় রাখতে হবে যে, ‘আমি আমার বস হব, আমি কাজ দেব। আমার মধ্যে সেই শক্তিটা আছে, সেই শক্তিটা আমি কাজে লাগাব’Ñ এই চিন্তাটা মাথায় যেন থাকে আমাদের যুবকদের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আমাদের তো সময় শেষ, কিন্তু যুবকরাই তো আসলে দেশের প্রাণসঞ্চার করবে। কাজেই সেভাবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে যাক, আমি সেটাই চাই।
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যদি তিনি (বঙ্গবন্ধু) বেঁচে থাকতেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা যদি বাঙালির জীবনে না ঘটত, তাহলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সারাবিশে^ উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারত। সেভাবেই তিনি পরিকল্পনা নিয়েছিলেন এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি এবং যারা হানাদার বাহিনীর দোসর, তাদের চাটুকার, খোশামোদি-তোষামোদি যারা করে, তারাই কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যা করে অগ্রযাত্রাটা ব্যাহত করেছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর যুবসমাজই যে সবার আগে প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছিল, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন।
সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আমাদের সবসময় একটা লক্ষ্য যে, জাতির পিতার যে আদর্শ, সেই আদর্শ সামনে নিয়ে আমাদের যুবসমাজকে আমরা গড়ে তুলব এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের আমরা গড়ে তুলব। এই বাংলাদেশ যেন একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে মর্যাদা নিয়ে বিশে^ এগিয়ে যেতে পারে আর সে সঙ্গে আমাদের দেশটা যেন আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদাশীল হয়।
যুবসমাজের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বয়সটা হলো কাজের বয়স, চিন্তার বয়স ও মেধা বিকাশের সময়। আর আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে, তরুণদের কর্মসংস্থানের দিকে ‘বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে’ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, এক সময় দেশে একটি টেলিভিশন ও একটা রেডিও স্টেশন ছিল। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে তার সরকার বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এক সময় দেশে মাত্র একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি সীমিত আকারে পরিচালিত হতো, মানুষের হাতের নাগালে মোবাইল ফোন ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর কম্পিউটার শিক্ষা থেকে শুরু করে সব আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান যাতে বিকশিত হয় তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
স্বাধীনতার পর দেশ গঠনে জাতির পিতার নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে দেশ ও মানুষের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে অর্থনীতি যেমন গতিশীলতা পেয়েছে, আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। আজকে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আমাদের রিজার্ভ আজকে ৪১ বিলিয়ন ডলার। আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য বিশেষ তহবিল তৈরি করে দিচ্ছি। আমাদের যেন অর্থনীতির চাকাটা সচল থাকে তার জন্য যা যা করণীয়, করে যাচ্ছি।
আজকে যারা যুবক, আগামী দিনে তারা দেশের কর্ণধার হবে; আজ যে শিশু জন্ম নিল, তার ভবিষ্যৎ যেন উন্নত হয়, সে কথা চিন্তা করেই সরকার সব পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আবারও সবাইকে মাস্ক ব্যবহারেরও নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। মহামারির মধ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে না পারলেও সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে তাদের ক্লাস নেওয়ার যে ব্যবস্থা হয়েছে, সে বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে যার যার পড়াশোনা নিজেদের একটু করতে হবে। মা-বাবাও সেটা যেন দেখে। আর খেলাধুলার প্র্যাকটিসটাও যেন থাকে, সে সুযোগটাও আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মূল অনুষ্ঠানস্থলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আখতার হোসেন ও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান কবিরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর ভিডিও কনফারেন্সের গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।