নারী সহকর্মীকে ধর্ষণ, ত্রানের টাকা লোপাট, ফাঁয়দা লেটার রাজনীতি, শীর্ষ কয়েক নেতার স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে নূর-রাশেদদের ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। শীর্ষ তিন নেতা নূরুল হক নূর, রাশেদ খান, ফারুক অবাঞ্চিত করে ২২ সদস্যের নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণার প্রেক্ষাপটে এবার একের পর এক পদত্যাগ শুরু করেছেন নেতারা। কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও খুলনাসহ বিভাগীয় পর্যায়ের নেতারা গণপদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর কমিটির নেতাদের পদত্যাগের ঘটনা ধামাচাপা দিতে নূর রাশেদরা কৌশলে কমিটি বিলুপ্ত বলে ঘোষণাও দিয়েছেন।
এর আগে এর আগে গত ১৫ অক্টোবর সহকর্মী নারীদের ধর্ষণ, নারী লাঞ্চনা, ত্রানের টাকা লুটপাট, ফাঁয়দা লেটার রাজনীতি, আর শীর্ষ কয়েক নেতার স্বেচ্ছাচারিতায় ভেঙ্গে যায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। একই সঙ্গে কোটা সংস্কার ও সড়ক আন্দোলননে আলোচিত এ সংগঠন থেকে অপকর্মের জন্য শীর্ষ তিন নেতা নূরুল হক নূর, রাশেদ খান, ফারুক হোসেনকে অবাঞ্চিত করে ২২ সদস্যের নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
সহকর্মীর ধর্ষণ মামলার আসামীদের বিরুদ্ধেঅবস্থান নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতারা। সংগঠনটির আগের নাম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামেই নেতৃবৃন্দ এবার নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন। নূর রাশেদদের সংগঠনের পরিচিত মূখ ও যুগ্ম আহবায়ক এ পি এম সুহেল হয়েছেন নতুন কমিটির আহবায়ক। নূর রাশেদদের সংগঠনের আরেক পরিচিত মূখ ও যুগ্ম আহবায়ক এবং ঢাকা কলেজের আহবায়ক ইসমাইল সম্রাট হয়েছেন নতুন কমিটির সদস্য সচিব। এছাড়া সাবেক দুই যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু ও মুজাম্মেল মিয়াজি নতুন কমিটির উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন।
সংগঠনের প্রতিবাদী এ নেতারা ইতোমধ্যেই নূর-রাশেদ গ্রুপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছেন। পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখা কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্বের দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। সংগঠনের নতুন কমিটি ঢাকা মহানগনের দায়িত্ব বন্টন করেছে। ঢাকা মহানগর উত্তরে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দ সামিউল ইসলাম। সহ সমন্বয়ক হচ্ছেন সাজ্জাদুর রহমান রাফি ও আফরান নাহিদ নিশো। ঢাকা মহানগর দক্ষিণে প্রধান সমন্বয়ক হচ্ছেন একেএম রাজন হোসাইন। সহ সমন্বয়ক হচ্ছেন নাদিম খান নিলয় ও পৃথু নাঈম।
নূরদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের খবর প্রকাশ্য আসার মধ্যেই প্রতিবাদী এ নেতারা বলেছেন, নুর স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন, সংগঠনের আর্থিক বিষয়ে অস্বচ্ছতা তৈরি করেছেন। ধর্ষণের শত অপরাধ করেও ফাঁয়দা লোটার রাজনীতি করছেন নূর ও তার সহযোগী অপরাধীরা।
নতুন সংগঠকদের আহবায়ক এ পি এম সুহেল বলেছেন, ‘মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে মানুষের আবেগ ও বিশ্বাস নিয়ে নোংরা রাজনীতি, নুর-রাশেদদের আর্থিক অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতা, সহযোদ্ধাদের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অবমূল্যায়ন করা এবং সম্প্রতি এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর করা ধর্ষণের মামলাকে নোংরা রাজনীতিকিকরণের অপচেষ্টাও চলছে। সংগঠনের অভ্যন্তরে চাপা ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয় ও এর বিরোধিতা করছেন সংগঠনের তৃণমূল থেকে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সুহেল আরো বলেন, গণমানুষের কথা বলে সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে, মুখের আড়ালে মুখোশ পরে আছে ভয়ঙ্কর কিছু সত্য, যা সংগঠনের প্রায় সবাই জানে, কিন্তু প্রকাশ করতে চায় না। এমনকি প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামে নূর যে সংগঠন বানিয়েছে তার একমাত্র উদ্দেশ্য, আমাদের প্রবাসী ভাইবোনদের কষ্টর্জিত টাকা লোপাট করা। সংগঠনের অভ্যন্তরে চাপা ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়। সংগঠনের স্বার্থে এবং তাদেরকে শোধরানোর সুযোগসহ নানা বিষয় চিন্তা করে তারা এতদিন চুপ ছিলেন। কিন্তু এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে সংগঠনের ভাঙ্গনের পর এবার বিভিন্ন ইউনিটে শুরু হয়েছে ভাংগন। বিভিন্ন ইউনিট থেকে নূরদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে।
জনকণ্ঠের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার জানিয়েছেন, সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হয় গত ২ নবেম্বর। ঢাকা মহানগর উত্তরে সভাপতি হন মোল্ল্যা রহমতুল্লাহ। তবে কমিটি ঘোষণার দুই দিনের মধ্যেই মোল্ল্যা রহমতুল্লাহ সভাপতিত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। এ প্রসঙ্গে গত ৪ নবেম্বর সংগঠনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি বলেন, কমিটিতে মহানগর শাখার পুরোনো ও ত্যাগী সহযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করে বিভাগীয় সমন্বয়কদের যোগসাজশে নতুন ও বারবার সংগঠন নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের পদায়ন করা হয়েছে, যা সংগঠনের নীতি ও আদর্শের পরপন্থি। সুস্পষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ করার পরেও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করায় স্বজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণে এক বছরের জন্য সভাপতির দায়িত্ব পান শাহ মুহাম্মদ সাগর। তবে তিনি শনিবার তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেন, প্রাণের এই সংগঠনের জন্য হয়তো কখনো বড় কোনো সেক্রিফাইস করার সুযোগ হয়নি। তবে কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোষও করে নি, ইনশাআল্লাহ এখনও করব না। ভালো থাকুক প্রাণের সংগঠন।
ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটিতে বিভাগীয় সমন্বয়কদের ‘সুদৃষ্টি’ থাকা মূল্যায়নের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন এই কমিটির দপ্তর সম্পাদক হাসিবুর রহমান। আহ্বায়কের কাছে পাঠানো পদত্যাগ পত্রে তিনি লিখেছেন, আমরা গ্রুপিং এর প্রমাণ আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছি, কিন্তু তার পরেও আপনারা আপনাদের অবস্থানে অট্টু। এই দুর্নীতি মেনে নিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণার ৬ দিন পর তা বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শনিবার সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে প্রতিবাদকারি নেতারা বলছেন, সংগঠনের ভাংগনের যে হিড়িক শুরু হয়েছে। মূলত এমন অবস্থানে ধামাচাপা দিতেই পদত্যাগের মধ্যে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার খবর দিচ্ছেন নূর-রাশেদরা।