দেশের সরকারি কলেজগুলোয় বর্তমানে ১৪ হাজার শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮০০ পদই শূন্য। উপজেলা পর্যায়ে কোনো কোনো কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে মাত্র একজন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক দিয়ে চলছে পুরো বিভাগ। একজন শিক্ষকই উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। সারা দেশের সরকারি কলেজগুলোর চিত্র প্রায় একই রকম। তবে উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষক সঙ্কট জেলা শহরের কলেজগুলোর চেয়ে বেশি। বিশেষ বিসিএসের (শিক্ষা) মাধ্যমে এসব শূন্যপদ পূরণের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। কলেজগুলোর শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে সরকারি কর্মকমিশনকে (পিএসসি) চিঠিও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ (মাউশি)।
৩৯তম (বিশেষ) বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসক ও ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ প্রক্রিয়া দেয় সরকার। করোনাকালে ওই বিসিএসের উত্তীর্ণ সবাইকে চিকিৎক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ৪০তম বিসিএস নিয়মানুযায়ী সাধারণ হয়েছে। এখন বিশেষ বিসিএস নিয়ে কাজ শুরু করছে পিএসসি। তবে ৪০তম বিসিএসে মোট ১৯০৩ জন ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ক্যাডার অনুসারে প্রশাসনে ২০০, পুলিশে ৭২, পররাষ্ট্রে ২৫, করে ২৪, শুল্ক আবগারিতে ৩২ ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ৮০০ জন নিয়োগ দেওয়ার কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ৪০তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন জারির আগে শূন্যপদের সংখ্যা আরও
বাড়তে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কলেজগুলোয় বর্তমানে শিক্ষক সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ সঙ্কট কাটাতে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পিএসসির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এ ছাড়া ৩৬তম বিসিএস থেকে ৯৪৭ জন, ৩৭তম বিসিএস থেকে ২২৪ জন এবং ৩৮তম বিসিএস থেকে ৯৯২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরে শূন্যপদ পূরণে বিশেষ বিসিএসের দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষা ক্যাডারদের সংগঠন ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’। জানা গেছে, কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সৃষ্টপদ পূরণে সরকারকে আরও ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এ ক্যাডারের সংগঠন ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির’ সভাপতি ও রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিমউল্লাহ খন্দকার বলেন, শিক্ষক সঙ্কটে সারা দেশে সরকারি কলেজগুলোয় পাঠদান তীব্রভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কবি নজরুল সরকারি কলেজে পদার্থবিদ্যা বিষয়ে শিক্ষকের মোট পদ ৪টি। অথচ কর্মরত রয়েছেন দুজন। এ বিভাগে দুটি প্রভাষক পদই খালি। দুজন শিক্ষক দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্সের ক্লাস নেওয়া খুবই কঠিন। তিনি বলেন, তার কলেজে শুধু উচ্চ মাধ্যমিকেরই শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি। তিনি বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।
রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদশূন্য না থাকলেও অদ্ভুত এক নিয়মে প্রতিবছর কলেজে শিক্ষার্থী বাড়লেও শিক্ষকের পদ বাড়েনি। সরকারি কলেজগুলোয় একটি বিষয়ে চার জনের বেশি শিক্ষক অনুমোদন দেওয়া হয় না। ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, তিতুমীর কলেজের হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাত্র চারজন শিক্ষক আছেন। এসব বিভাগে প্রায় তিন থেকে চার হাজার ছাত্রছাত্রী একাদশ শ্রেণি থেকে শুরু করে অনার্স ও মাস্টার্স করছেন। তিতুমীর ও ইডেন কলেজে একাদশ শ্রেণি নেই। কলেজগুলোয় মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স বিভাগ আছে। বিসিএসে (শিক্ষা) মার্কেটিং ও ফিন্যান্স বিষয়ে কোনো শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা ফিন্যান্স এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকরা মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়ান।