পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে যুবক রায়হান আহমদের মৃত্যুর ২৯ দিন পর ওই হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ সাময়িক বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশ জানায়, ভারতে পালানোর সময় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বিজিবি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ভারতীয় খাসিয়ারা আকবরকে আটক করে এক যুবকের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে সোপর্দ করেছে। আকবর গ্রেফতারের খবরে সিলেটের মানুষের উৎকণ্ঠার অবসান হলো। আর রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করে আকবরসহ হত্যাকা-ে জড়িত সবার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। গ্রেফতারের পর এসআই আকবরকে সন্ধ্যা ৫টা ৫৩ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় নিয়ে আসা হয় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। সেখানে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, রায়হান হত্যাকা-ের তিন দিন পর থেকে জেলা পুলিশ এসআই আকবরসহ জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে। সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। জিজ্ঞসাবাদ করা হয় অনেককে। সব থানা পুলিশকে সতর্ক রাখা হয়। গত রবিবার গোপন সূত্র থেকে খবর আসে আকবর সীমান্ত দিয়ে ভারত পালিয়ে যেতে পারেন। এ খবর পাওয়ার পর জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট থানার ওসিকে বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কানাইঘাট সীমান্ত এলাকায় সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গতকাল সকাল ৯টার দিকে ভারত পালিয়ে যাওয়ার সময় সাদা পোশাকে পুলিশ কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে আকবরকে গ্রেফতার করে। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ভারতে পালানোর সময় আকবরকে গ্রেফতারের দাবি করলেও গ্রেফতারের আগের কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে অন্য চিত্র। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েকজন আদিবাসী খাসিয়া যুবক রশি দিয়ে তার হাত-পা বাঁধছে। অন্য একটি ভিডিওতে বেঁধে রাখা অবস্থায় আকবরকে খাসিয়া যুবকরা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের প্রশ্নের জবাবে আকবর বলছিলেন, ‘আল্লাহর দোহাই আমি মারি নাই। ছিনতাইয়ের সময় পাঁচ-ছয় জন পিটিয়ে তাকে (রায়হান) মেরেছে। আমি তাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’ ভারতে পালিয়ে আসা প্রসেঙ্গ ওই ভিডিওতে এসআই আকবর বলছিলেন, ‘আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছিল দুই মাস গেলে হ্যান্ডল করা যাবে। তাই আমি পালিয়ে এসেছি। অন্য কোনো কারণে আসিনি।’ অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এক যুবক আকবরের হাত বাঁধতে চাইলে আকবর অনুনয়-বিনয় করছেন। তখন ওই যুবক বলছে, ‘তুই হ্যান্ডকাফ পরিয়ে অনেক লোককে ঘুরিয়েছিস। তোর হাত বেঁধে ছবি তুলে সিও স্যারকে পাঠাতে হবে।’ ভিডিওগুলোয় যে যুবকদের দেখা যাচ্ছিল তারা বাংলায় কথা বললেও তাদের কণ্ঠস্বর ছিল অবাঙালিদের মতো। ওই ভিডিও দেখে কানাইঘাটের স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, ভিডিওর যুবকদের কথাবার্তা ও এলাকা দেখে বোঝা গেছে, তারা ভারতের খাসিয়া আদিবাসী হতে পারে।