সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসে মন্তব্যের জের ধরে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা বাঙ্গরাবাজার থানা এলাকার পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুটি বাড়ির ৫টি ঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক ৩ মামলায় ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫ অভিযুক্তকে সাজা প্রদান করেছে মুরাদনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম কমল। অন্যদিকে, কোরবানপুর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী আন্দিকোট ইউনিয়নে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি মন্দিরকে ঘিরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। পুলিশ জানায়, আন্দিকোট ইউনিয়নে ডাকা গণজমায়েত সভা-সমাবেশকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় সোমবার (২ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ জানান, প্রশাসনের কাছে তথ্য ছিল সোমবার আন্দিকোট ইউনিয়নে পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুরে দুটি বাড়ির ৫টি ঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘিরে গণজমায়েত সভা-সমাবেশ হবে। এ ঘটনায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনার আশঙ্কায় আন্দিকোট ইউনিয়নে সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
তিনি আরও জানান, কোরবানপুরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ৫ অভিযুক্তকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছে মুরাদনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার সাইফুল ইসলাম কমল।
সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে মো. এরশাদকে (৪০) ১৮ মাস, হেলাল উদ্দিন ভূইয়াকে (৪৫) ১৮ মাস, এনু মিয়াকে (৪৮) ৬ মাস, মো. শানু মিয়াকে (৩৮) ১৮ মাস এবং মো. বাবু মিয়াকে (৩০) ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
বাঙ্গরাবাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, কোরবানপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুটি বাড়ির ৫টি ঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে হামলায় ভুক্তভোগী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নবকুমার শিব, লিটন দেবনাথ ও সন্দীপ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেন। তাদের মামলায় ক্রমানুসারে ৯১ জন, ৭৮ জন এবং ৮৪ জন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এই তিন মামলায় ৫শ’-র বেশি ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত ৫ আসামিও এই তিন মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে রয়েছেন।
এদিকে, রবিবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাসে কমেন্টের জের ধরে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা বাঙ্গরাবাজার থানা এলাকার পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুটি বাড়ির ৫টি ঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, মুরাদনগরের সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ও কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কোরবানপুর গ্রামের শিক্ষক শংকর দেবনাথ এবং আন্দিকুট গ্রামের অনিক ভৌমিক নামে দুই ব্যক্তি তাদের ফেসবুক আইডি থেকে মহানবীকে (সা.) নিয়ে ফ্রান্সে প্রদর্শিত ব্যঙ্গচিত্রকে সমর্থন করে মন্তব্য করেন। বিষয়টি স্থানীয়দের দৃষ্টিগোচর হলে এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
শনিবার রাতে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। এরপর রবিবার ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজবে পূর্বধইর পশ্চিম ইউপির চেয়ারম্যান বন কুমার শিবসহ ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের একাধিক বাড়ি ও হিন্দু ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।