ঢেলে সাজানো হচ্ছে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা। অনলাইনে মিলবে সকল তথ্য। ভূমি জরিপের নামে হয়রানি বন্ধ হচ্ছে চিরতরে। নতুন করে আর কোন মাঠ জরিপ হবে না। ভূ-উপগ্রহের (স্যাটেলাইটের) মাধ্যমে জরিপ করে তৈরি ম্যাপ থাকবে অনলাইনে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আগামী ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে সারাদেশের ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে জরিপ কাজ সম্পন্ন হবে বলে ভূমি সচিব মোঃ মাক্দুর রহমান পাটওয়ারী বলেছেন।
জমি রেজিস্ট্রেশনের মাত্র আটদিনের মধ্যে অটো নামজারির পাশাপাশি ভূমি ব্যবস্থপনায় আরও নতুন উদ্যোগ সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে জমি সংক্রান্ত প্রায় সকল হয়রানি থেকে দেশের মানুষ মুক্তি পাবে। এর সুফল পড়বে আদালতেও। আদালতের মামলা কমে আসবে। দেশের বিভিন্ন আদালতের চলমান মামলার প্রায় ৮০ শতাংশই জমি-জমাকে কেন্দ্র করে।
তিনি বলেন, সিএস জরিপের ওপর ভিত্তি করে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে সর্বশেষ জরিফের জমির ‘ইমেজ’ নেয়া হবে। মৌজা ম্যাপের ওপর ফেলে তথ্য উপাত্যের ভিত্তিতে নির্ভুল ম্যাপ তৈরি করা হবে। এই ম্যাপ অনলাইনে থাকবে। ওয়েবসাউটে গিয়ে যে কেউ এই অনলাইনে গিয়ে ম্যাপ দেখতে পারবেন। তিনি বলেন, এই কাজে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। যাতে কোন প্রকার ভুল-ভ্রান্তি না হয়। তারপরও কোন প্রকার ভুল হলে তা সংশোধনের জন্য ল্যান্ড সার্ভিস ট্রাইব্যুনালে মামলা করে তা সংশোধন করা যাবে।
তিনি বলেন, আগামী মার্চ মাসে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রথমে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এটি শুরু করা হবে। এর মাধ্যমে কোথাও কোন ভুলত্রুটি হলে সংশোধন করে পরে সারাদেশে কার্যক্রম চালানো হবে। আগামী ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমে সারাদেশের জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন করে ‘ম্যানুয়ালি’ আর কোন মাঠ জরিপ করা হবে না।
এদিকে মঙ্গলবার ভূমি সচিব মোঃ মাক্দুর রহমান পাটওয়ারী বলেছেন দেশব্যাপী নামজারি ও নিবন্ধন কার্যক্রম সমন্বয়সেবা চালু হলে বছরে এক কোটির বেশি মানুষ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, জমির নামজারি ও নিবন্ধনসেবা সমন্বয় কার্যক্রম দেশব্যাপী চালু হলে প্রতিবছর প্রদত্ত ২০ থেকে ২২ লাখ নামজারিসেবা আরও দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে দেয়া যাবে। ফলে বছরে সংশ্লিষ্ট এক কোটির অধিক মানুষ এ সেবার মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হবেন। মানুষের ভূমি-সংক্রান্ত হয়রানি কমবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় ভূমি সচিব মোঃ মাক্দুর রহমান পাটওয়ারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় ভূমি সচিব জমির নামজারি ও নিবন্ধন সমন্বয় কার্যক্রমের সদয় অনুমোদন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে প্রযুক্তিমুখী মন্ত্রী আখ্যায়িত করে ভূমি সচিব বলেন, তার নেতৃত্বে ভূমি মন্ত্রণালয় সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ভূমি সচিবের সভাপতিত্বে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত সভায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সোমবার ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে জমির নিবন্ধন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে উক্ত জমির নামজারি ও রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়ার ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এটুআই-এর সহযোগিতায় ভূমি মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগের ফসল। এ প্রক্রিয়ায় জমির নিবন্ধন শেষ হওয়ার আটদিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি হয়ে যাবে। এখন দেশের ১৭টি উপজেলায় এ কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এটি চালু হবে।