ইরানের সবচেয়ে প্রবীণ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসিন ফখরিযাদে রাজধানী তেহরানের কাছে আততায়ীর আক্রমণে মারা গেছেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র খবরটি নিশ্চিত করেছে। দামাভান্দ এলাকায় হামলার পর মি. ফখরিযাদে হাসপাতালে মারা গেছেন।
তেহরানের কাছে দামাভান্দ কাউন্টির আবসার্ড এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
ইরানের বার্তা সংস্থাগুলো বলছে আততায়ীরা প্রথমে তার গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে এবং তার পর তাকে গুলি করে।
পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাকে ইরানের গোপন পরমাণু কর্মসূচির পেছনে প্রধান মাথা বলে মনে করে। এবং মনে করে দেশটির গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে মি ফখরিযাদে মূল ভূমিকা রাখছেন।
কূটনীতিকরা তাকে “ইরানে বোমার জনক” বলে বর্ণনা করতেন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ যারিফ এই ঘটনাকে “সন্ত্রাসী কাজ” বলে বর্ণনা করে ইসরায়েল জড়িত থাকার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
‘এই কাপুরুষোচিত কাজ – যেখানে ইসরায়েলি ভূমিকার গভীর ইঙ্গিত আছে – প্রমাণ করছে আততায়ীরা যুদ্ধবাজে মরিয়া,” মি. যারিফ এক টুইট বার্তায় বলেন।
ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে। এরই মধ্যে এই হত্যার ঘটনা ঘটল।
বেসামরিক খাতে পারমাণবিক জ্বালানি তৈরির জন্য এবং একইসঙ্গে সামরিক কাজে ব্যবহারযোগ্য পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম একটি আবশ্যিক উপাদান।
ইরান সবসমেয়েই বলে এসেছে তারা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্যই একমাত্র তাদের পরমাণু কর্মসূচি ব্যবহার করে।
২০১৮ সালের মে মাসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি বক্তৃতার সময় মি. ফখিরাযাদের নাম বিশেষভাবে উল্লখ করে বলেছিলেন তিনিই ইরানের গোপন কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
কী ঘটেছে?
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে: “মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থার প্রধান মোহসিন ফখরিযাদেকে নিয়ে যে গাড়িটি যাচ্ছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সেই গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়।
“তার দেহরক্ষী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে এরপর সংঘর্ষ হয়। এতে মি. ফখরিযাদে গুরুতরভাবে আহত হন এবং দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
“চিকিৎসা কর্মীরা তাকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা ব্যর্থ হন এবং তিনি মারা গেছেন।”
ইরানের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে হামলাকারীরা বিজ্ঞানীর গড়ির ওপর গুলি চালিয়েছে।
ফার্স সংবাদসংস্থা তাদের একটি খবরে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের খবর দিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তারা বলেছিল সেখানে তিন থেকে চারজন হামলাকারী ছিল। যাদের সন্ত্রাসী বলে বলা হয়েছে এবং ফার্সের খবর অনুযায়ী তাদের হত্যা করা হয়েছে।
প্রতিক্রিয়া
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ যারিফ এই ঘটনাকে “সন্ত্রাসী কাজ” বলে বর্ণনা করেছেন। এক টুইট বার্তায় ইসরায়েলের জড়িত থাকার দিকে তিনি ইঙ্গিত করেছেন।
তিনি আন্তজার্তিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা যেন এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী কাজ বলে নিন্দা করে।
ইরানের রেভরল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার বলেছেন এই হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেওয়া হবে।
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চারজন পরমাণু বিজ্ঞানী আততায়ীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন এবং এইসব হত্যার ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত বলে ইরান অভিযোগ করেছে।
কে ছিলেন মোহসিন ফখরিযাদে?
মোহসিন ফখরিযাদে ইরানের সবচেয়ে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থার প্রধান। তিনি ইরানের রেভরল্যুশনারি গার্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও ছিলেন।
তাকে কূটনীতিকরা “ইরানে বোমার জনক” বলে বর্ণনা করতেন।
ইসরায়েল এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে তিনি ইরানের খুবই ক্ষমতাশালী ব্যক্তি এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধান স্তম্ভ।
২০১৮ সালে ইসরায়েল বলেছিল তাদের হাতে যেসব গোপন নথিপত্র এসেছে সেগুলো অনুয়ায়ী ইরানের পরমাণু কর্মসূচির তিনি প্রধান রূপকার। মি. ফখরিযাদের নেতৃত্বেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি গড়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেসময় বলেছিলেন “ওই নামটা মনে রাখবেন”- তিনি বলেছিলেন ইরানের পরমাণু কর্মসূচির তিনিই প্রধান বিজ্ঞানী।
২০১৫ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস তার তুলনা করেছিল জে রবার্ট ওপেনহাইমারের সাথে। মি. ওপেনহাইমার দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ম্যানহাটান প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যে প্রকল্পের অধীনে প্রথম আণবিক বোমা তৈরি করা হয়।
মি. ফখরিযাদের হত্যার ঘটনা নিয়ে ইসরায়েল এখনও কোন মন্তব্য করেনি।
সূত্রঃবিবিসি বাংলা