নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির মাসিক সভায় কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন বিলম্বিত করার অভিযোগ করেছেন কমিটির কিছু সদস্য।
তাদের অভিযোগ আগামী ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়নে অনীহা প্রকাশ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। যদিও এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। দলীয় সুত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৪ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে ও ২০১৫ সালে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগ রয়েছে কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হবার কয়েক বছর পার হলেও সম্মেলন না হওয়ায় দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির বর্তমান অনেক সদস্য বয়সের ভারে আক্রান্ত হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে বেশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের পদ প্রত্যাশী নেতারাও সম্মেলন চেয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থ হন। অবশেষে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর উদ্ভুত পরিস্থিতি অনুধাবন করেন এস এম কামাল হোসেন। তিনি দলের বিশেষ বর্ধিত সভাসহ একাধিকবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন দ্রæত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। গত ১৫ই নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ প্রতিনিধি সভায় চলতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে লালপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন কমিটির সম্মেলনের নির্দেশ দেন। তাদের অভিযোগ গত ২৮ নভেম্বর শনিবার থানা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলকে আমন্ত্রণ জানাননি উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী। সভা চলাকালীন কমিটির কয়েকজন নেতা উপজেলা ও ইউনিয়ন সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তুললে সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু ও সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী তা কৌশলে এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জয়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল বাশার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কাউসার বলেন, তারা কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন বিষয়ে যেহেতু রাজশাহী বিভাগী সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন একটি সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সেজন্য পদ প্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সম্মেলনের।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদক বলছেন রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল নেতার সাথে কথা বলে এবং জেলা সেক্রেটারি দেশের বাইরে থেকে ফিরে আসার পর তার সাথে কথা বলে তারপর সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রকৃতপক্ষে কমিটির শীর্ষ নেতারা নিজেদের পদ ধরতে রাখতে পরিকল্পিতভাবে বিলম্ব ঘটাচ্ছেন যা অপ্রত্যাশিত’। তারা দ্রæত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্মেলন চান। এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত ২৮ নভেম্বর থানা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সবার সাথে সমন্বয় করে এবং সম্মেলনের পরিবেশ সৃষ্টি করেই সম্মেলন করা হবে। রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনও সেই কথাই বলেছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ শেষ না হওয়ায় সে সময় সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। এর পরে সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে সম্মেলন করা হয়নি। চলতি বছরের মার্চে সম্মেলন করার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমন শুরু হওয়ায় সম্মেলন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ মেনে সম্মেলনের পরিবেশ সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করতে সম্মেলন করা হবে বলে সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা অভিযোগ করেছেন তারা কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় সম্মেলন সম্পর্কে কোন কথাই তুলেননি বলে তিনি জানান। স্থানীয় সংসদ সদস্যকে কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি উল্টো প্রশ্ন রাখেন কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় সংসদ সদস্যকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু গঠনতন্ত্রের বিধান মতে প্রতি তিন মাস অন্তর থানা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময় সভার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল নির্বাচনের প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও একটি মত বিনিময় সভাও করেননি। এছাড়া থানা আওয়ামীলীগের সাথে কোন সমন্বয় না করেই তিনি ইচ্ছা মাফিক কাজ করে চলেছেন। এমনকি তাদের না জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য সরকারী যে বাস ভবন রয়েছে সেখানে তিনি বিজ্ঞান ক্লাব খুলেছেন। এটা কি ঠিক হয়েছে? তার সমন্বয়হীনতার কারনে লালপুর উপজেলার সকল উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু বলেন,যারা অভিযোগ করেছেন তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান। কার্যনির্বাহী কমিটির ৭১ জন সদস্যের মধ্যে ২/৪ জন নিজেদের কাজ বাগানোর জন্য সংসদ সদস্যের কাছে ভাল সাজতে তারা এসব অভিযোগ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় তারা সম্মেলন সম্পর্কে কোন কথাই বলেননি। তারা দলকে সু-সংগঠিত করতে চান। কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় দলকে সু-সংগঠিত করতে ,দলকে এগিয়ে নিতে সাবেক সংসদ সদস্য, বর্তমান সংসদ সদস্য, দুই উপজেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে সম্মেলনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে সম্মেলন হবে এটাই তারা চান। কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্যেরই দায়িত্ব সেই সমন্বয় সাধনে কাজ করা। তারাও চান নতুন নেতৃত্ব আসুক। কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় কেন সংসদ সদস্যকে আমন্ত্রণ জানান হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনিও থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলীর মত একই কথা বলেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য সরকারী যে বাস ভবন রয়েছে সেখানে তিনি বিজ্ঞান ক্লাব খোলা হয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে সংসদ সদস্য সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, লালপুর থানা ্ওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মিথ্যাচার করা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই এধরণের মিথ্যাচার করেছেন। তিনি বিজ্ঞান ক্লাব খোলার বিষয়ে কিছু জানেনও না বা এ ধরণের কোন ক্লাব খোলার অনুষ্ঠানে ছিলেনও না।