তৃতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এজন্য একনেক সভায় ৬৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। এটি বাস্তবায়িত হলে ব্যান্ডউইথ বিক্রির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়বে। এ জন্য এই প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩০১ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে। বাকি ৩৯২ কোটি টাকার যোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়কারী কোম্পানি বিএসসিসিএল। চলতি বছরের অক্টোবরে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
গত কয়েক বছরে দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বৃদ্ধির হার প্রায় ৭০ শতাংশ। এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরো কয়েক বছর অব্যাহত থাকতে পারে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ২০২১ সাল নাগাদ দেশে ৫জি সেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেক্ষেত্রে সেক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথের চাহিদা আরো বাড়বে।
২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন কেবল এসএমডাব্লিউ-৪ এবং ২০১৭ সালে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল এসএমডাব্লিউ-৫ এ যুক্ত হয়। আলাদা দুটি কনস্টোমিয়ামের মাধ্যমে এই সাবমেরিন কেবল দুটি পরিচালিত হচ্ছে।
প্রথম সাবমেরিন কেবল এসএমডাব্লিউ-৪ এর ২০ বছরের আয়ুস্কাল আগামী ২০২৫ সালে শেষ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে এ কেবল ১৫ বছরের পুরনো হয়ে যাওয়ায় সেবা বিঘ্নিত হওয়ার হার বেশি। তাছাড়া তুলনামূলকভাবে পুরনো প্রযুক্তির কারণে এই কেবলের মাধ্যমে যথেষ্ট দ্রুত গতির সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে এর সংযোগ নেওয়ার আগ্রহ কম।
এসব বিষয় বিবেচনা করেই বাংলাদেশকে তৃতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে জানানো হয়েছে।
একনেকের বৈঠকে এদিন সাবমেরিন কেবল প্রকল্পসহ ২ হাজার ১১৫ কোটি টাকার মোট চারটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন প্রস্তব ছিল আগের তিনটি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির জন্য।
এর মধ্যে ১ হাজার ৪৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে, ৩৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তার খাত থেকে এবং ৩০০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে দেওয়া হবে বলে জানান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম।
এই বিবেচনায় আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একনেক সভায় তৃতীয় সাবমেরিন কেবল প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি।
এদিকে, আগে থেকেই বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউথ কিনছে ভারত। আর এরই মধ্যে চুক্তি করেছে ভুটান ও নতুন করে আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি আরব। তাই এই প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক আধুনিক করতে সংশোধিত প্রকল্পেরও অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তাবায়ন করবে বিটিসিএল। এসময় সংস্থাটিকে প্রত্যন্ত এলাকায় সেবা দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় জানানো হয়েছে, সিঙ্গাপুর হতে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত সাবমেরিন ক্যাবলটি ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূমধ্য সাগর অবধি বিস্তৃত হবে। ক্যাবলটির কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিশর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের ব্রাঞ্চটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারস্থ ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
নরসিংদী জেলার অন্তর্ভুক্ত আড়িয়াল খাঁ নদী, হাড়ি ধোয়া নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ, পাহাড়িয়া নদী, মেঘনা শাখা নদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র শাখা নদী পুনঃখনন (প্রথম সংশোধনী) প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৪০৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৭৪১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
মিউনিসিপাল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ২৭৭ কেটি ৩৫ লাখ টাকা।