দেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ক্যানসার আক্রান্ত। আর এ রোগে প্রতিবছর মারা যান দেড় লাখ। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রায় অসচেতনতা, শিল্পায়ন ও প্রযুক্তির বিরূপ প্রভাবসহ নানা কারণে দেশে ক্যানসারের রোগী বেড়ে চলেছে। তবে এতসংখ্যক ক্যানসার রোগীর যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা দেশে নেই। হাসপাতালও সীমিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এতে ব্যয় হবে প্রায় দুই হাজার ৩৮৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আট বিভাগীয় শহরে আটটি ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়টি একনেক সভায় পাস হয়। ইতোমধ্যে সাতটি বিভাগীয় শহরের হাসপাতালের ক্ষেত্রে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ঢাকার ক্ষেত্রে জায়গাসংক্রান্ত জটিলতায় টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। তবে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে জায়গা চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে প্রতিবছর ক্যানসারজনিত কারণে মারা যান দেড় লাখ। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ক্যানসারজনিত মৃত্যুর হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ । ২০৩০ সাল নাগাদ তা ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহী বিভাগে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, রংপুরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, খুলনায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, বরিশালে শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, ময়মনসিংহে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও সিলেটে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসায় বিশেষ এ চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপিত হবে। এর মধ্যে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও কার্যক্রম শুরু হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে এসব চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়, ক্যানসার চিকিৎসায় বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে আনাসহ দেশে ক্যানসার চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সূচনাতেই ক্যানসার নির্ণয় এবং সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া ক্যানসার প্রতিরোধ ও স্ক্রিনিং সেবা, হাসপাতালভিত্তিক ও জনগোষ্ঠীভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন, ক্যানসারের অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, নারী ও শিশুদের ক্যানসারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মেডিক্যাল অনকোলজি, রেডিয়েশন অনকোলজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, ইএনটি ও হেডনেক ক্যানসার, গাইনি অনকোলজি, পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ চালু করা হবে।
প্রস্তাবিত ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় দুটি বেজমেন্টসহ ১৫ তলার ফাউন্ডেশন দিয়ে একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ইতোমধ্যে সাতটি হাসপাতালের টেন্ডার প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে। জায়গাসংক্রান্ত জটিলতায় ঢাকার ক্যানসার হাসপাতালের টেন্ডার প্রক্রিয়া পিছিয়ে ছিল। এখন জায়গা চূড়ান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্মাণকাজ মনিটরিংয়ে কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি কাজের সার্বিক অগ্রগতি ও সার্বিকভাবে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিচ্ছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।