শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বিশ্ব শিক্ষক পুরস্কার (গ্লোবাল টিচার অ্যাওয়ার্ড) পেয়েছেন ভারতের মহারাষ্ট্রের একটি গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক। নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবদানের জন্যই মিলেছে এই বৈশ্বিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ১০ লাখ মার্কিন ডলার। পুরস্কারের এ অর্থের অর্ধেক তিনি দান করেছেন বাকি প্রতিযোগীদের মধ্যে। কারণ তাঁর মতে, এতে ওই শিক্ষকেরা তাঁদের উদ্যোগগুলো এগিয়ে নিতে পারবেন।
রণজিৎসিন দিশালে ভারতের মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার একটি গ্রামের জেলা পরিষদ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। পারিতেওয়াদি গ্রামের এই শিক্ষককে বিশ্বের ১৪০ দেশের ১২ হাজার মনোনীত শিক্ষকের মধ্য থেকে সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। আর রণজিৎসিন দিশালেকে সেরা হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে আয়োজকেরা বলেছেন, আদিবাসী–অধ্যুষিত এলাকায় নারীশিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদানের জন্যই বিশ্বের অন্যতম সেরা এই পুরস্কার ভারতীয় শিক্ষক পেয়েছেন।
গ্লোবাল টিচার অ্যাওয়ার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রণজিৎসিন দিশালে পড়ান আদিবাসী–অধ্যুষিত এলাকায়। সেখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য মাতৃভাষায় বই নেই। তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাসের বইগুলো মাতৃভাষায় অনুবাদ করে পড়ান। গ্রামের স্থানীয় ভাষায় পড়তে পারার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ক্লাসে থাকে বেশি। রণজিৎসিন দিশালে শিক্ষার্থীদের জন্য কিউআর কোডের মাধ্যমে অডিওতে কবিতা, ভিডিও লেকচার, গল্প ও অ্যাসাইনমেন্টের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বেড়েছে। তাঁর অনন্য কিউআর কোড প্রযুক্তি এখন পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে।
শিক্ষকতার পেশায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৪ সাল থেকে ইউনেসকোর সহায়তায় এই পুরস্কার দেওয়া শুরু করে লন্ডনের ভারকি ফাউন্ডেশন। পেশায় অসামান্য অবদান রাখা মানুষ গড়ার কারিগরদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়। ৩২ বছর বয়সী রণজিৎসিন দিশালে বিশ্বজুড়ে ১০ জন চূড়ান্ত শিক্ষকের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে গ্লোবাল শিক্ষক পুরস্কার পাওয়ায় রণজিৎসিন দিশালেকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রণজিৎ মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষক উদ্ভাবন তহবিলের মাধ্যমে শিক্ষার মান বাড়াতে তাঁর পুরস্কারের অর্থ ব্যবহার করবেন।
শিক্ষকেরাই বিশ্বে ‘প্রকৃত পরিবর্তন’ আনতে পারেন বলে মনে করেন রণজিৎসিন দিশালে। তাঁর মতে, মহামারি করোনাভাইরাসের সময় শিক্ষকেরা তাঁদের সর্বোচ্চ দিয়ে এটা নিশ্চিত করেছেন যে প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।
গত বৃহস্পতিবার এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে বিশ্ব শিক্ষক পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে বিশ্বের ১০ জন সেরা শিক্ষকের মধ্য থেকে ভারতের এক অজপাড়াগাঁয়ের শিক্ষক রণজিৎসিন দিশালেকে সেরা ঘোষণা দেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ব্রিটিশ অভিনেতা স্টিফেন ফ্রাই। তখন অনলাইনে এ অনুষ্ঠানে মা–বাবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রণজিৎসিন দিশালে। পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমার নয় সহযোগীকে পুরস্কারের অর্ধেক অর্থ আমি দিতে চাই।’ আর ২০১৪ সালে শুরু এ অ্যাওয়ার্ডের অনুষ্ঠানের এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল।
পুরস্কারের অর্ধেক করলেন দান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রাজিলের একজন করে শিক্ষক সেরা দশে ছিলেন। সবাইকে পেছনে ফেলে রণজিৎসিন দিশালেকে বেছে নেয় আয়োজন কর্তৃপক্ষ।
রণজিৎসিন দিশালে ফ্রাইকে অনলাইনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, পুরস্কারের অর্থ নয়জন শিক্ষকের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়াই মানেই তাঁদের কাজগুলো এগিয়ে নিতে সহায়তা করা। এর অর্থ হলো তাঁদের অবিশ্বাস্য কাজগুলো এখনো যৌক্তিক ও উপযুক্ত। আমি যদি বাকি শিক্ষকদের সঙ্গে পুরস্কারের অর্থ ভাগাভাগি করি, এতে তাঁরা তাঁদের কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। আর এতে যতটা সম্ভব শিক্ষার্থীর জীবন আলোকিত করতে পারব আমরা।’ তথ্যসূত্র: সিএনএন, এনডিটিভি ও টুইটার