দেশে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য এ্যান্টিজেন পরীক্ষা। শনিবার দেশের ১০ জেলায় এই পরীক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় এ্যান্টিজেন টেস্ট করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বর্তমানে আরটিপিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে দেশে করোনা শনাক্ত করা হচ্ছে।
শনিবার স্বাস্থ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা। এ সময় ১০ জেলার সিভিল সার্জন অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও দ্বিতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কার বিষয়ে বিবেচনায় নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আরটিপিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি এ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালানো হলে দেশের করোনা পরিস্থিতির আরও পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য সচিব মোঃ আব্দুল মানান বলেন, টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে দু’-চার দিনের মধ্যে মোবাইল ল্যাব চালু করা হবে। দু’টি মোবাইল ল্যাব চালু করা হবে প্রাথমিকভাবে। এগুলো আসকোনা ও দিয়াবাড়ির আইসোলেশন সেন্টারের আশপাশে নমুনা পরীক্ষা করবে।
অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, পটুয়াখালী, মেহেরপুর, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, মাদারীপুর ও সিলেটে এ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে শহীদ শামসুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বাকি ৯ জেলায় জেলা সদর হাসপাতালে এ টেস্ট করা হবে। এ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে রোগীর নাসারন্ধ্রের পেছন থেকে মিউকাস সংগ্রহ করে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে বিকল্প হিসেবে কখনও মুখগহ্বরের পেছন থেকেও নমুনা নেয়া হয়ে থাকে।
সংগৃহীত নমুনা থেকে পরীক্ষাগারে প্রথমে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভাইরাসটির আরএনএ আলাদা করে ফেলা হয়। আরটি-পিসিআর মেশিন পৃথক করা আরএনএকে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ায় ডিএনএতে রূপান্তরিত করে। এরপর ডিএনএর অংশ বিশেষকে পলিমার্স চেইন রিয়েকশনের সাহায্যে বহুগুণে বর্ধিত করে এর মাত্রা এমন একটি পর্যায়ে উন্নীত করে, যা মেশিন শনাক্ত করতে সক্ষম।
রোগীর কাছ থেকে সংগৃহীত নমুনায় যদি করোনাভাইরাস থাকে তাহলে এই বিক্রিয়া সংঘটিত হয় এবং ‘পজিটিভ’ সঙ্কেত পাওয়া যায়। অর্থাৎ যার নমুনা তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এ্যান্টিজেন টেস্টেও নাক কিংবা মুখগহ্বরের শ্লেষ্মা ব্যবহার করা হয়, তবে আরএনএ বিশ্লেষণের পরিবর্তে এখানে ভাইরাসের প্রোটিন শনাক্ত করা হয়। আবার রক্ত পরীক্ষা করেও এ্যান্টিজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নির্ভুলতার কারণে বরাবরই আরটি-পিসিআরের পক্ষে বলে আসছে। কেননা আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় ভাইরাসের জৈব রাসায়নিক উপাদানটি বিবর্ধিত করে বলে সংগৃহীত নমুনায় ভাইরাসের পরিমাণ নগণ্য হলেও শনাক্ত করতে পারে।
পক্ষান্তরে এ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ভাইরাসের প্রোটিনকে বিবর্ধিত করার কোন ব্যবস্থা নেই বলে নমুনায় ভাইরাসের পরিমাণ কম হলে তখন আর তা শনাক্ত হয় না। ফলে রোগী সংক্রমিত হলেও তা এ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ আসতে পারে, যাকে বলা হয় ‘ফলস নেগেটিভ’। তখন আবার লক্ষণ থাকলে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করতে হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস থেকে জানান, অবশেষে বিনামূল্যে বাংলাদেশে শুরু হলো র্যাপিড এ্যান্টিজেন টেস্ট। শনিবার সকালে জেলা সদর হাসপাতালের এ্যান্টিজেন টেস্টের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে দেশের ১০টি জেলাতে এই টেস্ট শুরু হলো।
সিলেট ॥ স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস থেকে জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার প্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্তের জন্য সিলেটে শুরু হয়েছে ‘এ্যান্টিজেন টেস্ট’। শনিবার দুপুর ১২টা থেকে এই টেস্ট শুরু হয়েছে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। এই টেস্টের জন্য কোন ধরনের ফি নেয়া হচ্ছে না। এ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সিলেটসহ দশটি জেলায় শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এ্যান্টিজেন টেস্ট। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতেও এই টেস্ট শুরু হবে। যাদের শরীরে ৩ দিন ধরে করোনার উপসর্গ (জ্বর, সর্দি, কাঁশি প্রভৃতি) আছে, তাদের এ্যান্টিজেন টেস্টের আওতায় আনা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাস শনাক্তে র্যাপিড এ্যান্টিজেন টেস্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে কম সময়ে করোনার ফলাফল জানা যাবে।
পঞ্চগড় ॥ স্টাফ রিপোর্টার পঞ্চগড় থেকে জানান, শুরু হলো করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে এ্যান্টিজেন টেস্ট। শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের করোনা টেস্ট সেন্টারে এ্যান্টিজেন টেস্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ আফরোজা বেগম রিনা।
মেহেরপুর ॥ ংবাদদাতা মেহেরপুর থেকে জানান, জেনারেল হাসপাতালের করোনাভাইরাস নমুনা সংগ্রহ বুথে এ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
পটুয়াখালী ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী থেকে জানান, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে র্যাপিড এ্যান্টিজেন পরীক্ষা শনিবার শুরু হয়। এ সময় সিভিল সার্জন ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম শিপন ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ আব্দুল মতিন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ভিডিও কনফারেন্সে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।