করোনার টিকা ক্রয়, সংরক্ষণ ও বিতরণে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চেয়ে সরকারের আহ্বানে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি এরই মধ্যে অর্থায়নে রাজি হয়েছে। শিগগিরই অর্থের পরিমাণ নির্ধারণসহ গোটা বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। অন্যদের সঙ্গে সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যেই ভিডিও কনফারেন্স হবে। আগামী মাসের শুরুতেই হাতে অর্থ পাওয়ার আশা করছে সরকার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোর ঢাকা অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, করোনার টিকা কিনতে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে বিশ্বব্যাংক। করোনা শুরুর দিকে জরুরি সহায়তা হিসেবে দেওয়া অর্থের সঙ্গে অতিরিক্ত এ ঋণ দেওয়া হবে। ইআরডির বিশ্বব্যাংক উইংয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, টিকা কিনতে বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার দিতে আপাতত রাজি হয়েছে।
ইআরডির এডিবি উইং প্রধান আব্দুল বাকি সমকালকে জানান, এডিবি ঋণ সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে তাদের সম্মতির কথা জানিয়েছে। টিকা কেনার জন্য গঠিত তহবিল থেকে বাংলাদেশ এ সহায়তা পাবে। এ সপ্তাহের মধ্যেই ভার্চুয়াল বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। সেভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন তারা। এডিবির ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বার সমকালকে বলেন, করোনার টিকা সংগ্রহে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এটা মাথায় রেখে এডিবির শীর্ষ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা শেষে ৯০০ কোটি ডলারের ঋণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিল থেকে বাংলাদেশ কত ডলার পাবে, তা এখনও নির্ধারণ হয়নি।
টিকা সংগ্রহে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে ২১ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ২৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে সরকার। সবার জন্য টিকা সংগ্রহে দাতা সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের বাইরে সরকারের নিজস্ব অর্থ হিসেবে প্রায় ৭৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। জনপ্রতি দুই ডোজ টিকার প্রয়োজন হবে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিস্কৃত করোনার টিকা পেতে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি করেছে সরকার।
সূত্রমতে, বড় ঋণদাতা সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ৫০ কোটি ডলারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে এডিবির কাছে। জাইকার কাছে ৫০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছেও ৫০ কোটি ডলারের অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষে ইআরডি গত অক্টোবরের বিভিন্ন তারিখে পৃথক চিঠি পাঠিয়ে এই সহায়তা চেয়েছে।
ইআরডির জাপান উইংয়ের কর্মকর্তা আশরাফ আলী ফারুক সমকালকে জানান, এখনও জাইকার কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এআইআইবি-সংশ্নিষ্ট উইং প্রধান শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিক জানান, এআইআইবির সঙ্গে আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র উইং সূত্রে জানা গেছে, টিকা সংগ্রহে সরাসরি কোনো সহায়তা চাওয়া হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। তবে করোনাকালে জরুরি চিকিৎসায় ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য সহযোগিতা পাওয়া গেছে ইউএসএআইডির মাধ্যমে।
শীতের শুরুতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুতই করোনার টিকা সংগ্রহ করতে চায় সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এরই মধ্যে জানিয়েছেন, আগামী মাসের শুরুর দিকেই টিকার প্রথম চালান দেশে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আপাতত তিন কোটি ডোজ আসার কথা রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। টিকা পরিবহন ও সংরক্ষণে উচ্চ প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। এ জন্য বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে ভ্যাকসিন সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বেক্সিমকো ফার্মা ও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে গত মাসে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে।